স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামে প্রায় ৩শ মেট্রিক টন চাল কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস করায় দুর্নীতিবাজ এক কর্মকর্তাসহ অবৈধ সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়েছেন গুদামের ওসিএলএসডির (ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা) আয়মান বিনতে ফেরদৌস নূপুর। প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেটের নানা অপতৎপরতায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও সেই কর্মকর্তা এখন দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছেন। সার্বক্ষণিক রয়েছেন উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত অবস্থায়। আর ওই অবস্থার মধ্যেই চলছে ধান সংগ্রহ অভিযান।
জানা যায়, চলতি বছরের ১০ জুন নকলা উপজেলা খাদ্য গুদামের দায়িত্ব থেকে বদলীমূলে ঝিনাইগাতী উপজেলা এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আয়মান বিনতে ফেরদৌস নূপুর। কিন্তু খাদ্য গুদামের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দেবনাথসহ স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট তার ওই যোগদান মেনে নিতে পারছিল না। এজন্য তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে বদলীর জন্য নানা অপতৎপরতা শুরু করে। ওই অবস্থায় তিনি দেখতে পান ওই গুদামের বেশীরভাগ চাল নষ্ট। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাৎক্ষণিক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। কমিটি গঠনের পরে বিকাশ চন্দ্র দেবনাথ সরকারিভাবে সংগ্রহ করা ২৯৯ মেট্রিক টন পচা চাল গুদাম থেকে বের করে সমপরিমাণ ভালো চাল কিনে ওই খাদ্য গুদামে সরবরাহ করেন। পরবর্তীতে তদন্তে বিষয়টির সত্যতা পায় কমিটি। ততক্ষণে বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ খাদ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নজরে এলে খাদ্য বিভাগ বিকাশ দেবনাথকে গত ৮ সেপ্টেম্বর সাসপেন্ড ও অন্যান্য সকলকেই তাৎক্ষণিক বদলীর আদেশ দেয়। সেইসাথে পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর নতুন কর্মকর্তা নূপুর তার দায়িত্ব বুঝে নেন। অন্যদিকে দেবনাথের স্বীকারোক্তি এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গত ১৯ নভেম্বর জেলা সংগ্রহ মনিটরিং কমিটির সভায় খারাপ চাল সরবরাহের দায়ে ওই উপজেলার ১০টি মিলকে এক মৌসুমের জন্য কালো তালিকাভূক্ত করা হয়।
এদিকে ঝিনাইগাতীর চালকল মাালিকদের একটি অসাধু সিন্ডিকেট বিকাশ চন্দ্র দেবনাথের সাথে যোগসাজস করে ওই গোডাউনে নিম্নমানের চাল দীর্ঘ দিন ধরে সরবরাহ করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ওই সিন্ডিকেট নতুন ওই কর্মকর্তা নূপুরকে আগের মত চাল গ্রহণ করতে প্রচন্ড চাপ দেয়। কিন্তু বর্তমান কর্মকর্তা আগের মত নিম্নমানের চাল গ্রহণ না করলে অনেক রথি-মহারথির ট্রাক ভর্তি চাল গুদাম থেকে ফেরত যায়। এরপর থেকেই চক্রটি ওই কর্মকর্তার উপর নাখোশ হয়ে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে মিলারদের একাংশের সাক্ষর নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি অভিযোগ এনে বদলীর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আর এতে যোগ দিয়েছে ওই সিন্ডিকেট ও কালো তালিকাভূক্ত মিলারদের একাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসলাম হোসেন কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের অন্যতম মেসার্স জাকির চালকলের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন দাবি করে বলেন, ভালো চাল দিতে গেলেও ওই কর্মকর্তা ঘুষ দাবি করেন।
অন্যদিকে সাধারণ মিল মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক, আবুল বাশার, আব্দুল কাফি জানান, আমরা মিটিং এ উপস্থিতির জন্য স্বাক্ষর করেছি মাত্র। আমরা কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন লিখিত দেইনি। মিল মালিকদের আরেক অংশ জানিয়েছে, আমাদের ভুল বুঝিয়ে সাক্ষর নিয়েছে। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আর ওসি এলএসডি নূপুর বলেন, আমি সরকারের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়েছি। তারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যর্থ হয়ে আমার বিরুদ্ধে তথাকথিত অভিযোগ তুলে কিছু মিলারদের ভুল বুঝিয়ে সাক্ষর নিয়ে আমাকে বদলীসহ নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, আমরাতো ঝিনাইগাতীর ওসিএলএসডির কোন অনিয়ম দেখছি না। বরং আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের কারণেই তার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এজন্য বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য ক্রয় কমিটির সভাপতি রুবেল মাহমুদ জানান, এখানকার খাদ্যগুদামের সমস্যা সম্পর্কে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। সংগ্রহ অভিযানে কোনোভাবেই সিন্ডিকেট তৎপরতা মেনে নেওয়া হবে না। খাদ্য সংগ্রহ অভিযান শতভাগ স্বচ্ছ রাখা হবে। এজন্য যদি বর্তমান ওসি এলএসডির বিরুদ্ধে হুমকি আসে তবে উপজেলা খাদ্য ক্রয় কমিটির প্রধান হিসেবে তিনি সেটি মোকাবেলা করবেন।