নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি ॥ রুটিন অনুযায়ী কাজ করতে করতে স্বাস্থ্য সহকারীদের প্রায়ই মনে হয়, প্রাকৃতিক কোন খোলামেলা পরিবেশে ঘুর আসতে পরালে মন্দ হতোনা। আর তাইতো সুযোগ পেলেই প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে মন চায় তাদের। তাই দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে পিকনিকের জন্য দিন তারিখ ঠিক করেন তারা।
কিন্তু প্রকৃতির কি নিয়তি! হঠাৎ এসব স্বাস্থ্য সহকারীদের মনে এতিম শিশুদের চিন্তা চলে আসে, তাদের প্রতি দেখা দেয় মমতা। তাই পিকনিকের দূরের স্পট বাতিল করে তারা একমত হন যে, দূরে কোথাও না গিয়ে বরং উপজেলার চিথলিয়া এলাকায় স্থাপিত মায়াকুঞ্জ চাইল্ট কেয়ারের এতিমদের সাথে নিয়ে তারা পিকনিকের আনন্দ উপভোগ করবেন।
অবশেষে ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার তারা চলে যান মায়াকুঞ্জ চাইল্ড কেয়ারের সেন্টারে। সেখানের এতিমদের সাথে মতবিনিময়, তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ও না বলা কথা শুনে তাদরকে আনন্দ দেওয়া, তাদের সাথে এক ফ্রেমে ছবি তোলা, দৌঁড়াদৌঁড়ি ও খেলাধুলা করে তাদের মুখে কিছুক্ষণের জন্য হলেও হাসি ফুটাতে পেরে স্বাস্থ্য সহকারী ভেজায় খুশি।

এই একটা দিন এতিম শিশুদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করা ছাড়া তেমন কোনো কাজ ছিলোনা তাদের। এ দিন যা হয় তার সবটুকুই আনন্দ আর আনন্দ। অনেক হাসি, গান, গল্প, কৌতুক আর দলবেধে এতিমদের নিয়ে আড্ডা দেওয়া ছিলো এদিনের প্রধান কাজ। আর যার যেমন মন চাচ্ছে এতিম শিশুদের আনন্দ দিতে তাদের সাথে নিয়ে দিন ব্যাপী ক্যামেরা বন্ধী হওয়ার হিড়িক চলে।
নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট স্থানে সবাই খেতে বসে। খাবার রান্না ও পরিবেশনের জন্য আনা হয়েছিলো সুপরিচিত স্থানীয় বাবুর্চি। চিকন চালের ঝরঝরে গরম ভাতের সঙ্গে গরুর গোসত, সবজী, মসুর ডাল, সালাদ-চাটনি দিয়ে খাওয়া শেষে করে কিছু সময় বিশ্রাম। প্রায়ই হয়তো এরকম খাবার সবাই খেয়ে থাকেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে এতিমদের নিয়ে খোলামেলা পরিবেশে বসে ভালোমানের খাবার খাওয়ার সুযোগ কমই মিলে।
খাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নেয়ার পালা। পাকা ফ্লোরে ও বেঞ্চে বা চেয়ারে বসে এতিমদেরকে নিজের ভাই বা ছেলের মতো ভেবে তাদেরকে কাছে বসিয়ে আদরে আদরে গল্প, আড্ডা, ছবি তোলা, সুরেলা-বেসুরেলা গলায় গান আর অযথাই হাসাহাসি। বিশ্রাম শেষে কিছুক্ষনের জন্য ব্যক্তিগত ছবি তুলার হুলুস্থুল শুরু হয়। এরই মধ্যে ক্রমেই দিন শেষ হতে থাকে, তাদের মনটা বেদনায় ভারাক্রান্ত হতে থাকে।
ফেরার প্রস্তুতির আগে তাদের এ ভ্রমনকে স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে সবাই ফটো সেশনে অংশ নেন। প্রথমে সবাই সকল এতিম শিশুদের নিয়ে, পরে স্বাস্থ্য সহকারীরা সবাই মিলে। অত:পর নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্য সহকারীরা আলাদা আলাদা ভাবে ফটো সেশনে অংশ নেন। ফটো সেশনে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এএইচআই) মর্তুজ আলী, স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) আনোয়ার হোসেন, হাবিবুর রহমান, মাসুম বেলাল, খন্দকার শরীফ, সুহেল মিয়া, ফরহাদ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্য, রফিকুল ইসলাম চাইনিজ, আফরোজা বেগম ও তার ছোট বোনসহ পরিবারের সদস্যরা, আজবিনা বেগম, হাফছা আইরিন মিলি ও তার পরিবারের সদস্যরা, নাসরিন জাহান ও তার পরিবারের সদস্যরা, জাহিদা আক্তার ও বোনসহ পরিবারের সদস্যরা ও সকল এতিম শিশুরা অংশ নিয়েছিলেন।
সরকারি চাকুরিজীবী অর্ধশতাধিক ভ্রমন পিপাসু মিলে ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার মাতিয়ে গেলেন মায়াকুঞ্জ চাইল্ট কেয়ার সেন্টারের আশপাশ। তাই দিনটি হয়তো অনেকের কাছেই চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন ভ্রমনপিপাসু মমতাময়ী স্বাস্থ্য সহকারীরা।
