শ্যামলবাংলা ডেস্ক : আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে সকল জাতীয় দিবস ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জাতীয় শ্লোগান হিসেবে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান ব্যবহার করা উচিত বলে অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিতে হবে। আমরা এভাবেই রায় দিবো। এটা আমাদের অভিমত। আদালত বলেন, ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’-এ ধরণের শ্লোগান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের জন্মের সঙ্গে যে শ্লোগান, তার কোনো পরিবর্তিত রূপ হতে পারে না। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার এ অভিমত ব্যক্ত করেন। আদালত ‘জয় বাংলা’ নিয়ে জারি করা রুলের ওপর ১৪ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির সময় নির্ধারণ করেছেন।
আজ রিট আবেদনকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। এছাড়া রিট আবেদনকারীকে সমর্থন করে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আব্দুল মতিন খসরু, এম কে রহমান, এএম আমিন উদ্দিন, মো. শাহ আলমসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদের করা এক রিট আবেদনে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’-কে কেন জাতীয় শ্লোগান হিসেবে ঘোষণার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রী পরিষদ, আইন ও শিক্ষা সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এরপর ওইবছরের ১০ ডিসেম্বর এক আদেশে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান নিয়ে সরকারের বক্তব্য ও রাষ্ট্রীয় নীতি জানতে চান। এরই ধারাবাহিকতায় দুই বছর আগে জারি করা রুলের ওপর আজ শুনানি হয়।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘জয় বাংলা’ ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষনে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেওয়া হয়। এই শ্লোগান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক হীনমন্যতা থেকেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় শ্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’।
তিনি বলেন, এটা কোনো সাধারণ শ্লোগান নয়। এটা একটি চেতনা। এই চেতনাকেই ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। এই শ্লোগানে উজ্জীবিত হয়েই বাঙ্গালীরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আমাদের সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান সন্নিবেশিত করা হয়। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী আদালতের আদেশ দেবার ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মকে এই শ্লোগান সম্পর্কে জানাতে হবে। এটা আমাদের শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের শক্তি। আব্দুল মতিন খসরু এমপি বলেন, ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’-এটা কেন? ‘জয় বাংলা’ নয় কেন? এটা জাতীয় শ্লোগান হিসেবে ঘোষনা করতে বাধা থাকার কথা নয়।
আদালত বলেন, পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ভাবমূর্তি বিনস্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশে একমাত্র শ্লোগান হওয়া উচিত ‘জয় বাংলা’। এর কোনো বিকল্প হতে পারে না।
আদালত বলেন, ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’-এটা কেন? দেশের জন্মের সঙ্গে যে শ্লোগান তার কোনো পরিবর্তিত রূপ হতে পারে না। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে এই শ্লোগান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই শ্লোগান ব্যবহারে আমাদের মধ্যে দ্বিধা কোথায়? এই শ্লোগানকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
আজ শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চেয়ে আবেদন করেন। তিনি বলেন, আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) লিখিতভাবে বিস্তারিতভাবে জবাব দিতে চাই। এরপর আদালত আগামী ১৪ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
