শ্যামলবাংলা ডেস্ক ॥ মিসর থেকে কার্গো বিমানে জরুরী ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রথম চালান ঢাকায় আনা হচ্ছে ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার। ঋণপত্র খোলা, দ্রুত পেঁয়াজ এয়ারপোর্টে নিয়ে এসে জাহাজীকরণ, গুণগতমান পরীক্ষাসহ সবধরনের আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে এস আলম গ্রুপ। পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশে মিসরীয় দূতাবাস, মিসরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এস আলম গ্রুপকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছে। দ্রুত পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকার আমদানির এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, তুরস্ক থেকে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবি’র আমদানিকৃত পেঁয়াজও দ্রুত দেশে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারী এসব উদ্যোগের ফলে দেশে দ্রুত পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন। তিনি বলেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত মিসর থেকে কার্গো বিমানযোগে পেঁয়াজ আনা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে দেশে মসলা জাতীয় এই পণ্যটির সঙ্কট তৈরি হয়। সেই থেকে দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দফায় দফায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। শনিবার বিকেলে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ২৬০-২৮০ এবং আমদানিকৃতটি ২২০-২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রেকর্ড দামে পেঁয়াজ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। এছাড়া ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ওই দেশটির বেশিরভাগ রাজ্যে ১০০ রুপীর ওপরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ।
জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। বাজারে না ছেড়ে অতি মুনাফার আসায় পেঁয়াজ মজুদ করা হচ্ছে। মজুদকৃত নষ্ট পেঁয়াজের সন্ধান পাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কয়েকদফায় টন টন নষ্ট পেঁয়াজ নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। ভোক্তারা ন্যায্য দামে পেঁয়াজ পাচ্ছে না, অন্যদিকে টন টন পেঁয়াজ পচিয়ে ফেলা হচ্ছে। দ্রুত এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন দেশের সাধারণ মানুষ ও ভোক্তারা।
এ প্রসঙ্গে কাপ্তান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মজিদ সরদার বলেন, এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ওই বাজারের পেঁয়াজ ক্রেতা হানিফ মিয়া বলেন, বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে শত টন পেঁয়াজ গুদামে নষ্ট হলো। অথচ এসব পেঁয়াজ বাজারে ছাড়া হলে দাম কমতো। তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে বাজার স্থিতিশীল করা প্রয়োজন।
জানা গেছে, আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত বাজারে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া সমুদ্র পথে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাংলাদেশের পথে রয়েছে। পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় এই চালান খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে পৌঁছাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ পরিবহনে কয়েকদিনের জন্য সমস্যা হয়েছিল। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জরুরীভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব কম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে। এসব পেঁয়াজ বাজারে আসলে মূল্য স্বাভাবিক হবে। এর পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বন্ধে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। বাজার মনিটরিং করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। এছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজার অভিযান জোরদার করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত দেশীয় নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে।