শ্যামলবাংলা ডেস্ক : নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত নূর হোসেনকে নিয়ে কূরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এই ইস্যুতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের এমপিদের পাশাপাশি নিজ দল জাতীয় পার্টির এমপিরা ছিলেন একাট্টা। ১৩ নভেম্বর মঙ্গলবার পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে সাংসদরা ওই দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী ওই আলোচিত বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। পরে আলোচনায় অংশ নেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, নজিবুল বশর মাইজ ভান্ডারী। ওইসময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ছিলেন। তবে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা সংসদে উপস্থিত ছিলেন না।

সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙ্গা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের মানুষের মনে ব্যাথা দিয়েছেন। রাঙ্গা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বলেছেন। আজকে এরশাদ জীবিত নেই। তাকে নিয়ে বেশিকিছু বলতে চাই না। তিনি নূর হোসেনের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। সংসদের দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অথচ রাঙ্গা নূর হোসেন নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিয়েছেন। তার এমন বক্তব্য ঘৃণা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, রাঙ্গার বক্তব্যের পর আজকে স্বৈরাচার শব্দটি দেশে ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। রাঙ্গার কুশপুত্তলিকা দাহ করছে। তার এ বক্তব্যের সংসদে এসে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ করছি। তিনি আরও বলেন, রাঙ্গা যে এলাকার থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে না থাকলে বিজয়ী হতেন কিনা এটা বলতে চাই না।
আমির হোসেন আমু বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন। যারা ফেনসিডিল আওয়াজ তুলেছেন তারাই ফেনসিডিলের স্বপ্ন দেখে। নূর হোসেনের আমলে তো ফেনসিডিল ছিল না। তিনি বলেন, রাঙ্গার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইতে হবে।
শেখ সেলিম বলেন, কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারে না। আমি তখন যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলাম। কোনো বিবেগমান মানুষ ধরনের কুটূক্তি করতে পারে না। তিনি বলেন, রাঙ্গার শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না। জাতীয় পার্টি এর ব্যাখ্যা দিবে।
এছাড়া সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজবান্ডরী বলেন, রাঙ্গার বক্তব্য নূর হোসেনের বিরুদ্ধে নয়, দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। তকে সংসদে এসে ক্ষমতা চাইতে হবে। তা নাহলে তাদেরকে আগামী দিন আস্তাকুঁড়ে যেতে হবে। এছাড়া রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদ থেকেও বহিস্কারের দাবি জানান তিনি।
এরপর তাদের বক্তব্যের জবাবে জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এটা রাঙ্গার ব্যক্তিগত বক্তব্য। জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে এটা সমর্থন করে না। এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত বক্তব্য তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা তিনি নিজেই দেবেন। ’ তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন মারা যাওয়ার পর তার বাসায় গিয়ে আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া নূর হোসেনের পরিবারকে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি।
জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, এই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে গেছে। এটা জাপার বক্তব্য নয়। জাতীয় পার্টি এতে লজ্জিত ও দুঃখিত, আমরা এতে লজ্জিত। একটি রাজনৈতিক দলের নেতা এমন বক্তব্য দিতে পারেন না। তিনি বলেন, বানরকে লায় দিলে গাছে উঠে।
