শ্যামলবাংলা ডেস্ক : ঢাকাসহ সারা দেশে কাগজে-কলমে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হলেও আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নে আরও সময় নেওয়ার কথা বলছে পুলিশ। যারা আইনটি প্রয়োগ করবেন, ট্রাফিক পুলিশের সেই কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনও আইনটি সম্পর্কে অবগত নন। এছাড়া এ আইনের বিধি-বিধান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই চালক-পথচারীদেরও। শুক্রবার ও শনিবার প্রথম দুইদিনে আইন কার্যকরের ঢাকা মহানগরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি, নতুন আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পুলিশের পস মেশিনের সফটওয়্যারও আপডেট হয়নি। এদিকে নতুন আইনে প্রথম ৭ দিন কোনো মামলা হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২ নবেম্ভর শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করা হয়েছে। তবে এখন সারাদেশ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রথম ৭দিন ওই প্রচারণা চলবে। ওইসময় কোনো পরিবহনের বিরুদ্ধে নতুন আইনে মামলা না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। নতুন আইন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনা কমে যাওয়াসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
শনিবার রাজধানীর আজীমপুর, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, গুলিস্তান, শাহবাগসহ বেশ কিছু জায়গা ঘুরে হেলমেট ছাড়া বাইক, এক বাইকে তিনজন, লেগুনার পেছনে ঝুলন্ত যাত্রী, যেখানে সেখানে বাস থামানোসহ বেশ কিছু অনিয়ম চোখে পড়ে। ওই বিষয়ে জানতে চাইলে নিউমার্কেট এলাকায় দায়িত্বরত সার্জেন্ট শাহাদাত জানান, নতুন আইন শুক্রবার থেকে চালু হওয়ার কথা থাকলেও আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে, এ আইনের ফলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলে বিশ্বাস আমার। মানুষ মামলার ভয়ে হলেও আইন মেনে চলবে।

বিজয় সরণি এলাকায় এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, নতুন আইনটি খুব ভালো শুনতেছি। আইনটি প্রয়োগ হলে জীবনের নিরাপত্তা বাড়বে, সড়ক শৃঙ্খল হবে। তবে কিছুক্ষেত্রে আইনটি বেশি কঠোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো কারণে আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও যদি কাছে না থাকার কারণে জেল বা জরিমানা গুণতে হয় তাহলে তা খুব দুঃখজনক। এক্ষেত্রে ডিজিটালাইডজ করা কিংবা কনসিডারের বিকল্প পন্থা থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, কিছু সময় লাগছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়। গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্যও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পাস না করলে লাইসেন্স পাবেন না চালকরা। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে এক মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। আইনে সাধারণ চালকের বয়স আগের মতোই কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। ফিটনেস চলে যাওয়ার পরেও মোটরযান ব্যবহার করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
দুর্ঘটনার জন্য দণ্ডবিধি অনুযায়ী ৩ রকমের বিধান রয়েছে। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের সাজা হবে। খুন না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ড হবে। দুই গাড়ি পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। দুর্ঘটনায় না পড়লেও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য আইনে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে আইনে। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়ঃজ্যেষ্ঠ যাত্রীর জন্য সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনো যাত্রী বসলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।
মদপান বা নেশাজতীয় দ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালালে, সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালালে, উল্টো দিকে গাড়ি চালালে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য স্থানে গাড়ি থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, চালকছাড়া মোটরসাইকেল একজনের বেশি সহযাত্রী উঠালে, মোটরসাইকেলের চালক ও সহযাত্রীর হেলমেট না থাকলে, ছাদে যাত্রী বা পণ্য বহন, সড়ক বা ফুটপাতে গাড়ি সারানোর নামে যানবাহন রেখে পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, ফুটপাতের ওপর দিয়ে কোনো মোটরযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড প্রস্তাব করা হয়েছে।
