মোঃ নজরুল ইসলাম, ময়সনসিংহ ॥ প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পাবলিক পরীক্ষা প্রহণ করতে যাচ্ছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এ বছরের আগামী ২ নভেম্বর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার (জেএসসি) মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ যাত্রা শুরু হচ্ছে দেশের ১১তম শিক্ষা বোর্ড- ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহ’র। ১২৫টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষায় অংশ নেবে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫৩ শিক্ষার্থী। এতে মোট ১ হাজার ৪শত ৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০২০ সালে এএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও এই বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহ’র অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যসিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু মনিটরিং, উন্নয়ন পরিচালনা, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে জনমূখী ও ডিজিটাল বোর্ডে রূপ দিতে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাসান কামালসহ সহকর্মীরা দিনরাত অক্লান্ত নিরলস পরিশ্রম করছেন। প্রতিষ্ঠার দুবছরের মধ্যে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহনের সক্ষমতা অর্জন করায় এবং সুষ্ঠুভাবে বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন বোর্ড কর্তৃপক্ষের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সুষ্ঠুভাবে বোর্ডের অব্যাহত থাকাসহ বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হওয়ায় ময়মনসিংহ বিভাগবাসীও দারুন আনন্দিত।
শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রজ্ঞাপন জারির পর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় চৌকস শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ড. গাজী হাসান কামালকে। ময়মনসিংহ শহেরর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ পুরুষ এর প্রমোট ভবনে এবং শহরের ঢোলাদিয়া রোড কাঠগোলা বাজারে দুটি ভাড়া বাড়িতে বোর্ডের কার্যক্রম চলছে। সাধারণ শিক্ষা বোর্ড হিসেবে এটি নবম। প্রস্তাবিত ১৭৫ জনবলের বিপরীতে মাত্র ২৯ জন (১৪ জন প্রেষণে, ১২ জন অস্থায়ী এবং ৩ জন আউটসোর্সিং) দিয়ে কার্যক্রম চলছে। এ বোর্ডের অধীনে রয়েছে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুর জেলার নি¤œ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী হাসান কামাল জানান, নবগঠিত ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ডিজিটালে রূপান্তর হচ্ছে। উচ্চ মাত্রার ওয়াই-ফাই চালু করা হয়েছে বোর্ড অফিসে। শুরু থেকেই ই-জিপি টেন্ডার কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামরার আওতায় আনা হয়েছে বোর্ড অফিস । দ্রুত সেবা দেয়ার জন্য ই-ফাইলিং ও অনলাইন শিক্ষা প্রোফাইল কার্যক্রম চালু হয়েছে। নিয়ম-নীতি মেনেই স্কুল-কলেজের রেজিস্ট্রেশন, পরিদর্শন, নবায়ন, পাঠদান, স্বীকৃতি ও অনুমোদনের কাজ পরিচালিত হচ্ছে। স্থানাভাব ও জনবলের তীব্র সংকটের কারণে অমানসিক কষ্ট করতে হচ্ছে। তবু কাঙ্খিত সেবা দিতে পিছ পা হচ্ছেন না শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। অতি জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ ও স্থানাভাব দূর করা প্রয়োজন।
ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসি বলেন, পাবলিক পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান করা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের অংশ। এই বোর্ডের সকল পরীক্ষা যাতে আরো ভালোভাবে সম্পন্ন করা হয় তার জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ড বাস্তবায়নের দাবীতে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে নিয়মতন্ত্রিক আন্দোলনকারী সংগঠন জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমীন কালাম জানান, ২০১৭ সালের ২৮ আগষ্ট ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের প্রজ্ঞাপণ জারি এবং ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগের পর দুবছরের মধ্যে একটি পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন কষ্টসাধ্য ব্যাপার। দ্রুত পরীক্ষা নেয়ার সক্ষমতা অর্জন করায় বোর্ড কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি। কোনো অবস্থাতে যেন এই বোর্ডের সুনাম নষ্ট না হয় এবং প্রয়োজনীয় সেবা থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে সদা নজর দিতে হবে। সেই সাথে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহনের প্রশাসন সহ সকলের আন্তরিক সহযোগীতার আহবান জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমীন কালাম ।
সরকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ময়মনসিংহ অঞ্চলের নবনির্বাচিত সভাপতি ও দেশবরেণ্য শিক্ষবিদ বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা ঃ নাছিমা আক্তার জানান, নতুন শিক্ষা বোর্ডের প্রথম জেএসসি পরীক্ষা গ্রহন করার পুরো বিভাগবাসী আনন্দিত। আমরা সকলেই শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা গ্রহনে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
গণকল্যাণ পরিষদ (জিকেপি) নির্বাহী পরিচালক, শম্ভুগঞ্জ জিকেপি (অনার্স) কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘলালিত প্রত্যাশা ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। প্রতিষ্ঠার দুবছরের মধ্যে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের সক্ষমতা অর্জন করা একটি কঠিন ও চ্যালেঞ্জও বটে। নানা সংকটের মধ্যে মাত্র ২৯জন জনবলের মাধ্যমে দিনরাত পরিশ্রম করে পরীক্ষার আয়োজন করায় সুদক্ষ বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী হাসান কামালসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান তিনি। আধুনিক ও পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই বোর্ডটি দেশসেরা বোর্ডের তকমা অর্জন করুক এবং শিক্ষার্থীরা দেশসেরা ফলাফল অর্জন করুক এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সাথে ময়মনসিংহ বিভাগের সাংবাদিক সমাজও দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ছিলো। বোর্ড প্রতিষ্ঠা পর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে জেনে সাংবাদিক সমাজও বোর্ড কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। পরীক্ষায় কোনো রকম গুজবে কান না দিয়ে এবং কারো কোনো কথা শুনে কোনো রকম যাচাই না করে সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকাসহ সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহবান জানিয়েছেন ময়মননিংহ বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পদক মোঃ নজরুল ইসলাম । সঠিক সংবাদের উৎস্য যাচাইয়ে কেন্দ্র সচিব, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসক ও বোর্ডের কন্ট্রোল রুমের সাথে কোনো যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের শিক্ষক সমাজ বোর্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলো। ময়মনসিংহে বোর্ড না থাকায় সবচেয়ে বেশী কষ্টের শিকার হয়েছিলো শিক্ষকরা। বোর্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষকদের সীমাহীন কষ্ট ও দুর্ভোগের অবসান হয়েছে। নতুন বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এ অঞ্চলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দারনু খুশি। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে যাতে বোর্ডের সকল পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয় তার সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন শিক্ষক নেতা মোঃ আনোয়ার হোসেন ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার জি. এম সালেহ উদ্দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত চিঠি পাঠান। পরে আগস্টের মাঝামাঝি সরকার ময়মনসিংহে নতুন শিক্ষা বোর্ড স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে এর যৌক্তিকতা যাচাইয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির মতামতের ভিত্তিতে ময়মনসিংহে নতুন শিক্ষা বোর্ড স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা অনুমোদন করেন। ২৮ আগস্ট ২০১৭ সালে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে এই শিক্ষা বোর্ড ৯ম বোর্ড। সকল শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ১১তম শিক্ষা বোর্ড।