নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি ॥ শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেষা বারমারী সাধু লিওর খ্রীস্টান ধর্মপল্লীতে আগামী ২৪-২৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু’দিনব্যাপী ফাতেমা রাণীর ২২তম তীর্থোৎসব উপলক্ষে উৎসবের আমেজ চলছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। খ্রীস্টধর্মাবলম্বীরা এখন শুধু হিসেব করছেন দিন আর ক্ষণের। কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
এ তীর্থোৎসবে মহা খ্রীস্টযাগ, গীতি আলেখ্য, আলোক শোভাযাত্রা তথা আলোর মিছিল, নিশীজাগরন, নিরাময় অনুষ্ঠান, পাপ স্বীকার, জীবন্ত ক্রুশের পথসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। খ্রীস্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ গ্রহন করে প্রায় ২ কিঃ মিঃ পাহাড়ী ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে ৪২ ফুট উচু মা-মারিয়ার মুর্তির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে নির্মল হ্দয়ের অধিকারীনি, ঈশ্বর জননী, খ্রীস্টভক্তের রাণী, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রাণীর কর কমলে ভক্তি শ্রদ্বা জানায় ও তার অকৃপন সাহায্য প্রার্থনা করে থাকে এদিন।
তীর্থ উদযাপন কমিটির সমন্বয়কারী রেভারেন্ট ফাদার মনিদ্র এম. চিরান জানান, প্রায় ৩০/৪০ হাজার খ্রীস্টভক্তের অংশ গ্রহনে ২৪-২৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ‘বিশ্বাসের যাত্রায় মিলনের সমাজ গঠনে ফাতেমা রাণী মা মারিয়া।’ এই মুলসুরের উপর ভিত্তি করে শুরু হচ্ছে দু’দিন ব্যাপী বাৎসরিক তীর্থোৎসব। ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় পাপ স্বীকার, ৪টায় পবিত্র খ্রীস্টযাগ, রাত ৮টায় আলোক শোভাযাত্রা, ১১টায় সাক্রান্তের আরাধনা, রাত ১২টায় নিশি জাগরণ ও নিরাময় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ২৫ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৮টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০টায় মহা খ্রীস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থোৎসবের সমাপ্তী হবে।
সুত্র আরও জানায়, উদ্বোধনী খ্রীস্টযাগ উৎসর্গ করবেন ময়মনসিংহ খ্রীস্টধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাটোরের রেভারেন্ট ফাদার ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। এছাড়াও শেষ দিন শুক্রবার প্রয়াত সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট প্রমোদ মানকিনের ছেলে বর্তমান সাংসদ মি. জুয়েল আরেং তীর্থোৎসবে উপস্থিত থাকবেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছেন।
তীর্থোৎসবের ব্যাপারে বারমারী ধর্মপল্লীর ভাইস চেয়ারম্যান ও ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. লুইস নেংমিনজা বলেন, দিনদিন এ তীর্থ স্থানে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ বছর প্রায় ৩০/৪০ হাজার দেশি-বিদেশি খ্রীস্টভক্তরা তীর্থ যাত্রায় অংশ গ্রহন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তীর্থযাত্রীদের জন্য তীর্থ উদযাপন কর্তৃপক্ষ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। তিনি জানান, এবারে নিরাপত্তা প্রদানে ১জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, দমকল বাহিনী, আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক দল সার্বক্ষনিক নিরাপত্তায় নিয়েজিত থাকবে। থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা। পারস্পারিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এই তীর্থ যাত্রা অনুষ্ঠানকে সফল করতে তিনি সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।
উল্লেখ্য, বিগত ১৯৯৮ সালে এখানে পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরনে ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান স্থাপন করা হয়। স্থাপনকাল থেকেই প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন মুলসুরের উপর ভিত্তি করে খ্রীস্টধর্মাবলম্বীরা বার্ষিক তীর্থোৎসব পালন করে আসছে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেষা বারমারী সাধু লিওর খ্রীস্টান ধর্মপল্লীতে।