হয়রানীর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন ॥ অভিযোগ অস্বীকার পুলিশের
স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেরপুরের নকলায় পুলিশ অ্যাসল্টের এক মামলায় ৩ দিন যাবত গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে একটি এলাকা। তারা গ্রেফতার আতঙ্কে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। বসতবাড়িতে থাকা নারীরাও রয়েছে আতঙ্কে। ২১ অক্টোবর সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোন কোন বাড়ি-ঘর একেবারেই মানুষশূন্য। ওইসব বাড়ি-ঘরে ঝুলছে তালা। এদিকে সোমবার দুপুরে শেরপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই মামলা ও ৪ নারীসহ ৮ জনকে গ্রেফতারের ঘটনাকে হয়রানীমূলক বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এদিন ওই ৮ আসামির জামিনের আবেদনসহ পুলিশ রিমা-ের আবেদন নামঞ্জুর করে তাদেরকে দু’দিনের জন্য জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহসিনা হোসেন তুশী। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, নারী নির্যাতনের মামলার এক আসামিকে গ্রেফতারের পর তাদের উপর হামলা ও আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ওই মামলা হয়েছে।
জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে নকলা উপজেলার পূর্ব লাভা গ্রামের আলহাজ্ব হায়েত আলীর (৬৫) বাড়ি থেকে এসআই আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ একটি ধর্ষণ মামলার সহযোগী আসামী শ্যামল (৪৫) কে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনায় ওই বাড়ির লোকজনের সাথে পুলিশের বাদানুবাদ এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কিতে রূপ নেয়। ওই সুযোগে কৌশলে সটকে পড়ে আসামি শ্যামল। পরে ওই ঘটনায় এসআই আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা, হামলা ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গৃহকর্তা হায়েত আলীসহ ৩৫ জনকে স্ব-নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪০/৪৫ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় ৪ নারীসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে। ওই মামলা, গ্রেফতার ও অভিযানের ঘটনায় ঘটনার পর থেকেই এলাকাটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।
এদিকে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে লাভা গ্রামের মোকছেদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তার ছোটভাই শ্যামলকে হয়রানীমূলকভাবে একটি বিতর্কিত নারী নির্যাতনের মামলায় জড়ানো হয়েছে। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে সে স্থানীয় একটি বাড়িতে লুকানোর কারণেই পুলিশ বাড়ির বয়স্ক-অসুস্থ মহিলাসহ অন্যদের প্রতি অযাচিত দুর্ব্যবহার করায় তর্কাতর্কি ও বাদানুবাদ হয়েছে মাত্র। সেখানে আসামি ছিনতাইয়ের কোন ঘটনা ঘটেনি। বরং ওই তুচ্ছ ঘটনার পর থানা পুলিশের লোকজন ওই বাড়িতে ব্যাপক তা-ব চালিয়েছে। এরপর শ্যামলের বাড়িতে তা-বসহ স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করা হয়েছে। আর তাতে বাধা দেওয়ার কারণে শ্যামলের স্ত্রী সুবর্ণাকে (৩০) দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় হাজতে ঢুকানো হয়েছে, যা একেবারেই অমানবিক। তিনি আরও অভিযোগ করেন, পুলিশী গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য হওয়ার সুবাদে তার ছোটভাইয়ের মৎস্যখামার থেকে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার মাছ দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে গেছে। ওই ঘটনায় এলাকাবাসীর তরফ থেকে সুষ্ঠু তদন্তসহ প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসীর অভিযোগ সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে দায়িত্বরত ৪ পুলিশকে আহত করে আসামি শ্যামলকে ছিনতাই করা হয়েছে। পুলিশ দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, নির্দোষ যারা তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তাদের পুলিশী হয়রানীর শিকারও হতে হবে না-বিষয়টি পুলিশের তরফ থেকে এলাকায় জানানও দেওয়া হয়েছে। তবে দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।