মো. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ : টেমস নদীর দুই পাশে ইংল্যান্ডে রাজধানী লন্ডন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সফল মন্ত্রী ও নেতা প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একান্ত ইচ্ছা ছিলো লন্ডন শহরের আদলে ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পাশে হবে ময়মনসিংহ শহর। নানা সমীকরণের পর অবশেষে আবারও ময়মনসিংহ বিভাগীয় নতুন শহর বাস্তবায়নের উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে। এখন জনবসতি লোকালয়ে নয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় ফসলি ও ঘনবসতি এলাকা বাদ দিয়ে ব্রহ্মপুত্র তীর ঘেঁষে প্রাথমিকভাবে দুটি প্রস্তাব নিয়ে এগুচ্ছে প্রশাসন। সরকারের ধারণার সাথে শরিক হওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণের সাথে এক মতবিনিময়ে মিলিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এতে স্থানীয় লোকজন সাড়ে ৯শত একর জমি নিয়ে প্রস্তাবটি নিয়ে শহর গড়লে জনগণ সহযোগিতা দেবেন। বেশী জমি নিয়ে এলাকাবাসী ভেবে দেখবেন। অবশ্য ব্রহ্মপুত্র তীর ঘেঁষে আরও অনেক বেশী জমি অধিগ্রহন করলেও তাতে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির ক্ষতি হবে না বলে এলাকার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার জয়বাংলা বাজারে শনিবার বিকালে অধিগ্রহনকৃত এলাকার মানুষের এক সমাবেশে বক্তব্যে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান এসব তথ্য জানান।
জানা যায়, ৪ বছর আগে ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন হয়। এর কয়েক মাস পর বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন ময়মনসিংহ বিভাগীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ও আধুনিক শহর গড়ার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ মূল শহর ঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র নদের চর এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই জমির মধ্যে অসংখ্য মানুষের বাড়ি-ঘর, মসজিদ মাদ্রাসা ও কবরস্থান থাকায় চর এলাকার মানুষ নিজের বসত বাড়ি রক্ষার জন্য আন্দোলনে নামে। দুই বছরের বেশি সময় আন্দোলনের পর সরকার ওই জমি অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়। সরকারিভাবে ওই প্রকল্পটি বাতিল করার পর আবারও নতুনভাবে জমি অধিগ্রহন করে নতুন শহর ও বিভাগীয় কার্যালয়সমূহ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে।
চর এলাকার বসতভিটা রক্ষার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানান, নতুন প্রকল্প নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমান চর আন্দোলনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার পর সিন্ধান্ত হয় গত শনিবার এ বিষয়ে চর এলাকার সাধারণ বাসিন্দাদের সঙ্গে ইউএনও কথা বলবেন। সে সিদ্ধান্তে ১৯ অক্টোবর শনিবার বিকেলে জয়বাংলা বাজারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে ইউএনও শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, নতুন করে ৯৫০ একর ও ২ হাজার ৯৮৩ একার জমি অধিগ্রহনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এরমধ্যে ৯৫০ একর জমির যে পরিকল্পনা সেটি বাস্তবায়নের ইচ্ছা প্রশাসনের। ৯৫০ ওই জমির বেশির ভাগই খাস জমি। ওই জমি অধিগ্রহন করা হলে মানুষের কোন ক্ষতি হবে না। বাতিল হওয়ার সাড়ে ৪ হাজার জমির প্রকল্পে চর এলাকার ৬ থেকে সাতটি গ্রাম ছিল। নতুন যে প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে সেখানে রয়েছে তিনটি গ্রাম। গ্রামগুলো হচ্ছে চর জেলখানা, গোবিন্দাপুর ও পাড়া লক্ষèীর আলগী।
ইউএনও তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, ৯৫০ একর জমি পাথমিক পরিকল্পনায় থাকলেও পাশাপাশি ২ হাজার ৯৮৩ একর জমি নিয়েও একটি পরিকল্পনা আছে। সে জন্য ওই এলাকায় একটি জরিপ চালাতে হতে পারে। তবে ইউএনও এ বক্তব্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সমাবেশে উপস্থিত মানুষ জানায়, তাঁর ৯৫০ একর জমির বাইরে অন্য কোন জমিতে জমিতে জরিপ চালানোর পক্ষ নন। পরে ইউএনও বলেন,যা কিছু হবে তা আপনাদের ভালর জন্য। চর এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে কোন সিন্ধান্ত নেওয়া হবে না। জমি অধিগ্রহন হলে জমির দাম প্রকাশ্যে দেওয়া হবে। কেউ ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবে না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন। তারা চরবাসীর পক্ষে ইউএনওকে অনুরোধ করেন, অধিগ্রহনে যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
বিভাগ বাস্তবায়নের পর পর জমি অধিগ্রহন করার সিন্ধান্ত হওয়ার পর চর এলাকার মানুষ নিজেদের বসত বাড়ি রক্ষায় ধারাবাহিক আন্দোলন করে। চর এলাকার মানুষের দাবি, তাঁরা নতুন শহরের বিপক্ষে নয়। তাঁদের আন্দোলনের প্রতিপাদ্য ছিল বসত বাড়ি রক্ষা করে জমি অধিগ্রহন করার জন্য দাবি। এ লক্ষ্যে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনের কাছে একটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল।
শম্ভুগঞ্জ গণকল্যাণ পরিষদ (জিকেপি) নির্বাহী পরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন মাদার অব হিউম্যানিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আশা করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় নতুন শহরটিকে লন্ডন শহরের আদলে গড়তে চেয়েছেন, যা আমাদের জন্য একটি বিশেষ পাওয়া। সাবেক সফল মন্ত্রী ও নেতা প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও একই একান্ত ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। দলমত নির্বিশেষ প্রধানমন্ত্রী ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের সকলকে নতুন শহর বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করা উচিত। সেই সাথে ঘনবসতি এলাকা বাদ দিয়ে ব্রহ্মপূত্র নদের তীর ঘেঁষে একটি আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গ্রহন করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
