শ্যামলবাংলা ডেস্ক : বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কেউ যদি কোনও অপরাধ করে, সে কোন দল করে, কী করে, তা আমি দেখি না, অপরাধী অপরাধীই। বুয়েটে এই ঘটনা যখন ঘটে, সকালে শুনে আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলাম আলামত সংগ্রহ করতে, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে। ছাত্ররা নামার আগেই আমরা তৎপরতা শুরু করি। কে ছাত্রলীগ বা কী জানি না। অপরাধী অপরাধীই, অন্যায়কারীর বিচার হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো বলেছি, ঘটনা সঙ্গে জড়িত কোথায় কে ছিল সব কয়টাকে গ্রেফতার করতে। তবে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার পর সেটা আনতে দেবে না। আমার মনে প্রশ্ন দেখা দিলো, এটা কেন? হত্যাকারীদের কেউ কি এর মধ্যে আছে যে ফুটেজ প্রকাশিত হলে তাদের পরিচয় বের হয়ে যাবে কিনা। পরে তারা ফুটেজ নিয়ে আসলো এবং কর্তৃপক্ষকে একটা কপি দিয়ে আসলো। ৯ অক্টোবর বুধবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি ওইসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ ও ভারত সফরের বিষয়ে অবহিত করতেই ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘একটা বাচ্চা ছেলে, ২১ বছর বয়স। তাকে হত্যা করা হলো। মারা হলো পিটিয়ে পিটিয়ে। কী অমানবিক। পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা দেখেছি। সব ইনজুরি ভেতরে।’ তিনি বলেন, ‘একটা কথা আমার মাথায় এলো। ২০০১ সালে আমাদের নেতাকর্মীদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মারা হতো এমনভাবে যাতে বাইরে থেকে বোঝা যেত না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত কত হত্যা হয়েছে। ছাত্রদল বুয়েটে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে সনিকে হত্যা করেছে। ওই বুয়েটে আমাদের কত নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমরা কারও কাছে বিচার পেয়েছি? ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমি চেষ্টা করেছি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে তারা আমার পার্টির এটা আমি কখনোই মেনে নেবো না। আমি সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগকে ডেকেছি। তাদের বহিষ্কার করতে বলেছি, পুলিশকে বলেছি অ্যারেস্ট করতে। ছাত্র রাজনীতিতে, এই বুয়েটে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকেও তো হত্যা করা হয়েছে। কেউ কোনও দিন বলেছে, কেউ অ্যারেস্ট হয়েছে? এটা করা হয়নি। আমি ক্ষমতায় আসার পর চেষ্টা করেছি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে। কে ছাত্রলীগ বা কী জানি না। অপরাধী অপরাধীই, অন্যায় যে করেছে সে অন্যায়কারী। তার বিচার হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আন্দোলন বা কীসের জন্য। বিচার তো হবেই। যে মা সন্তান হারিয়েছেন, যে বাবা সন্তান হারিয়েছেন তাদের যে কষ্টটা কী সেটা আমি বুঝি। একটা সাধারণ পরিবারের ছেলে, একটা ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। তাকে কেন হত্যা করা হলো। এই নৃশংসতা কেন, এই জঘন্য কাজ কেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। কোনও দল টল বলে আমি মানি না। আমি বিচার পাইনি। যখন কেউ বিচার দাবি করে সেটা আমি বুঝি।’
সাংবাদিকদের জন্য সম্প্রতি সরকার ঘোষিত নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের ব্যাপারে সংবাদপত্র মালিকদের এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওয়েজবোর্ডের ব্যাপারে আমাদের যে দায়িত্ব ছিল সেটা করেছি। এখন সংবাদপত্র মালিকরা না দিলে আমরা কী করব? এটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে মালিকদেরই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ সরকার সম্প্রতি সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করেছে। এই ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য সরকার আলাদা আইন করবে কিনা−এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী উপরোক্ত মন্তব্য করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘এখন এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমি তাকেই দায়িত্ব দিলাম।’
ক্যাসিনো বা জুয়ার জন্য দেশের একটি জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য নির্ধারিত নোয়াখালীর ভাসানচরের এক পাশে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথা বলেছেন। ক্যাসিনো ও জুয়ার জন্য তিনি নীতিমালা তৈরির কথাও এ সময় বলেন।
তিনি বলেন, যারা ক্যাসিনো ও জুয়া খেলে অভ্যস্ত হয়ে গেছে- তাদের কেউ কেউ হয়তো দেশ থেকে ভেগে গেছে। এখানে সেখানে খেলার জায়গা খোঁজাখুঁজি করছে। আমি বলেছি, একটা দ্বীপ মতো জায়গা খুঁজে বের করো, সে দ্বীপে আমরা সব ব্যবস্থা করে দেবো। দরকার হলে ভাসানচর বিশাল দ্বীপ, এর একপাশে রোহিঙ্গা আরেক পাশে এই ক্যাসিনোর ব্যবস্থা করে দেবো। সবাই ওখানে চলে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাস্তবতার নিরীখে বলছি, অভ্যাস যদি বদভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, এই বদভ্যাস যাবে না, বার বার খোঁজাখুঁজি করতে হবে। তাই বার বার খোঁজাখুঁজি না করে একটা জায়গা ঠিক করে দেবো। ভাসানচর খুব বড় জায়গা। ১০ লাখ লোকের বসতি দেওয়া যাবে। তার একটা এলাকা না হয়… কারা কারা (ক্যাসিনো) করতে চায় করতে পারবেন। লাইসেন্স নিতে হবে, ট্যাক্স দিতে হবে। তারপর ওখানে গিয়ে কারা কারা করবেন করেন, আমার কোনও আপত্তি নাই।
তিনি বলেন, এখন যারা লুকায় চুরায় এটা সেটা করে, তারা সেখানে গিয়ে খেলতে পারবেন। কারা কারা করতে চায় নীতিমালা তৈরি করে লাইসেন্স নিতে হবে। ট্যাক্স দিতে হবে। তারপর সেখানে গিয়ে সবাই মিলে করেন আমাদের কোন সমস্যা নেই। সেই ব্যবস্থা করে দেবো। এতে আমরা ট্যাক্স পাবো তো টাকা পাবো। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে সাংবাদিক সারির কয়েকজন হেসে উঠলে তিনি বলেন, আমি বাস্তবতাটাই বলছি।
