শ্যামলবাংলা ডেস্ক : জমে উঠেছে শারদীয় দুর্গোৎসব। পাঁচ দিনের এই উৎসব ঘিরে সারাদেশে এখন আনন্দমুখর পরিবেশ। শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনে রোববার মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশনসহ বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে একই সঙ্গে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। ৬ অক্টোবর রবিবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা শুরু হয়। এরপর পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ শেষে দুপুর ২টা ২৬ মিনিট থেকে ৩টা ১৪ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠসহ কয়েকটি পূজামণ্ডপে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে দুর্গাপূজা আয়োজনের কারণে এসব মণ্ডপে পূজার সময়ের হেরফের ঘটবে কিছুটা।
তবে দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনের প্রধান আকর্ষণ কুমারী পূজা। সকাল ১০টায় রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামট মেয়েকে কুমারী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে, যাকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার একটি নামকরণও করা হয়েছে।
শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে অন্নদা বলা হয়ে থাকে।রবিবার রাজধানী ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর, ফরিদপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পূজামণ্ডপেও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এর আগে দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিনে শনিবার মহাসপ্তমীতে ভক্ত, পূজারি ও দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় ছিল সারাদেশের ৩১ হাজার ৩৯৮টি পূজামণ্ডপে। মণ্ডপে মণ্ডপে এদিন ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের বারতা। মহাসপ্তমীর দিনে সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে শুরু হয় দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ। এরপর দেবীর সপ্তমীবিহিত পূজা শেষে আয়োজন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি। অনেক মণ্ডপেই ছিল আরতি, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দরিদ্রদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, নৃত্যনাট্য, ভক্তিমূলক সঙ্গীত, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য আয়োজন।
সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকার পূজামণ্ডপগুলোও এদিন ঢাক-ঘণ্টার বাদ্যি-বাজনা আর ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখর হয়ে ওঠে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে সর্বত্র উৎসবের ছোঁয়া দেখা গেছে। পূজা দেখতে আসা নানা বয়সী দর্শনার্থী, পূজারি ও ভক্তদের ভিড় ছিল ব্যাপক। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ভিড় মণ্ডপ ছাড়িয়ে চলে যায় রাস্তায়। উৎসবে যোগ দিয়েছেন অন্য ধর্মের মানুষও। এতে মণ্ডপগুলো বাঙালির সর্বজনীন উৎসবের মেলাঙ্গনে রূপ নেয়। আজ মহাষ্টমীর দিন এ ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির মণ্ডপে গতকাল মহাসপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় উপস্থিত ছিলেন। রোববার মহাষ্টমীর দিনে সেখানে ৩৫ হাজার দর্শনার্থী-ভক্তের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে।
