স্টাফ রিপোর্টার ॥ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের শেষ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই ও প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত পরিবেশ অনেকটা নিরুত্তাপ মনে হলেও এখন ক্রমেই চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠছে। পোস্টার-মাইকিংয়ের পাশাপাশি প্রতিদিনই চলছে প্রার্থীদের গণসংযোগ ও পথসভা। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ ভোটাররাও যেন নড়ে-চড়ে উঠছেন।
এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ৩ প্রার্থীসহ ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম (নৌকা), বিএনপি মনোনীত জেলা যুবদলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইলিয়াস উদ্দিন (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সাবেক জিএস মিনহাজ উদ্দিন মিনাল (মোটরসাইকেল) ও পদত্যাগী ভাইস-চেয়ারম্যান, সাবেক ভিপি বায়েযীদ হাসান (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনার জন্য মূল কমিটি এবং পৌরসভাসহ উপজেলার ১৪০টি ভোট কেন্দ্রের জন্য পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ওইসব কমিটিগুলোর মাধ্যমে স্ব-স্ব এলাকায় কেন্দ্র খোলাসহ গণসংযোগ শুরু হয়েছে। এছাড়া পৌর এলাকাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। আর প্রার্থীসহ একাধিক টিম প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করছেন। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে টানানো হয়েছে পোস্টার। মাইকিং-প্রচারণাও চলছে পুরোদমে। এর মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরিচিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে উঠেছেন ভোটাররা। একইভাবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মাসুদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য পুরোদমে কার্যক্রম শুরু না হলেও অনেকটা নীরবে-নিভৃতে তাদের কার্যক্রমও এগুচ্ছে। মূল কমিটির পাশাপাশি তারাও কেন্দ্র কমিটিগুলো সেরে নিচ্ছেন। কমতি নেই পোস্টার ও মাইকিং প্রচারণায়। নিজ এলাকাসহ চরাঞ্চলে খ- খ- পথসভাও হচ্ছে। সব মিলিয়ে ইতোমধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মাঝেও পরিচিতি বাড়ছে এ প্রার্থীর। জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইলিয়াছ উদ্দিনের মাইকিং ও পোস্টার প্রচারণাসহ কেন্দ্রে কেন্দ্রে কমিটি গঠনের চেষ্টাও চলছে। একইভাবে চলছে আওয়ামী লীগের ২ বিদ্রোহী প্রার্থী মিনহাজ উদ্দিন মিনাল ও বায়েযীদ হাছানের প্রচার-প্রচারণা। আর এ সব কিছু মিলে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ-পথসভা যত বাড়ছে, নিরুত্তাপ নির্বাচন যেন ক্রমেই জমে উঠছে।
এদিকে পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে সদর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আল হেলাল (টিউবওয়েল), সাবেক ভিপি মোহাম্মদ মনোয়ারুল ইসলাম (চশমা), চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মোছা মিঞা (মাইক), শ্রমিক নেতা জুলহাস উদ্দিন (উড়োজাহাজ) ও আশরাফুল আলম মিজান (তালা) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তাদের মধ্যে অন্যান্য প্রার্র্থীদের প্রচার-প্রচারণা অনেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চললেও ইতোমধ্যে মনোয়ারুল ইসলামের চশমা ও আল হেলালের টিউবওয়েল প্রতীকের প্রচার-প্রচারণা অনেকটাই জমে উঠেছে। এছাড়া মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বিদায়ী ভাইস-চেয়ারম্যান, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীম আরা বেগম (হাঁস) ও শেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবিহা জামান শাপলা (কলস) প্রতীকে লড়ছেন। দু’প্রার্থীর এ লড়াই ইতোমধ্যেই মানুষের মুখে মুখে পৌঁছে গেছে। সাবিহা জামান শাপলা নিজ দলের বাইরে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী না থাকায় তাদের ঘরানার ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ অক্টোবর ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬১ হাজার ২৮২ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭৭ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৬০৫ জন। মোট ১৪০ ভোটকেন্দ্রের ভোটকক্ষ সংখ্যা ৯৫৩ টি।