শ্যামলবাংলা ডেস্ক : ১৪ জনের জায়গা প্রায় ঠিকই ছিল, শুধু একটি জায়গা নিয়ে কোচ, অধিনায়ক আর নির্বাচকদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার নেওয়া হবে, নাকি একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে রাখা হবে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত স্কোয়াডে। ব্যাটিং অলরাউন্ডারের জায়গায় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের নামটি সামনের সারিতেই ছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রায়ে মোসাদ্দেক নন, বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী রাব্বি।
আপাতত এটাই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ স্কোয়াডের চমকের নাম। সেই সঙ্গে ২০১১ সালের পর আবারও বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ এসেছে পেসার শফিউল ইসলামের সামনে। এরই মধ্যে বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ১৬ জনের নাম চূড়ান্ত করে বিসিবির পক্ষ থেকে আইসিসির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে পেসার তাসকিন আহমেদকে রাখা হয়েছে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে।
আইসিসির বেঁধে দেওয়া শেষ সময় ২৩ এপ্রিলের মধ্যে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে ১৫ জনের চূড়ান্ত খেলোয়াড়ের তালিকা পাঠাতে হবে। তবে ২৩ মের আগে যে কোনো সময় খেলোয়াড় পরিবর্তনের একটা সুযোগ রেখে দিয়েছে আইসিসি। কারণ যে কোনো সময় যে কোনো খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়তে পারেন। এই সুযোগ নিতেই তাসকিনসহ ১৬ জনের নাম আইসিসিতে পাঠিয়েছে বিসিবি।
আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা হতে পারে ১৮ এপ্রিল। এরই মধ্যে অবশ্য নিউজিল্যান্ড সবার আগে বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। কিউই দলে চমক টম ব্লানডেল। এর আগে কখনোই ওয়ানডে খেলেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। তেমনি বাংলাদেশ স্কোয়াডের চমক ইয়াসির আলী রাব্বিরও সেই সুযোগ হয়নি। কিন্তু চট্টগ্রামের এই ছেলের খেলা দেখে মুগ্ধ নির্বাচকপ্রধান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও কোচ স্টিভ রোডস। বিপিএলেই তার খেলা দেখেছেন স্টিভ রোডস।
এবারের বিপিএলে ভালো খেলে পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছেন ইয়াসির। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে দারুণ কিছু ইনিংস খেলেছিলেন ২৩ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার। জাতীয় দলের প্রধান কোচ স্টিভ রোডসও বিপিএলে ইয়াসির আলীর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। ঢাকা লীগেও ব্যাটিংয়ে ছন্দ দেখাচ্ছেন ব্রাদার্সের মিডল অর্ডার এ ব্যাটসম্যান।
আবাহনীর বিপক্ষে হার না মানা ১০৬ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। যেখানে ৯৪ প্লাস স্ট্রাইক রেট রেখে ইনিংসটি গড়েছেন। লীগে এ পর্যন্ত আট ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি ৫০ ছোঁয়া ইনিংস আছে তার। প্রতিটি ম্যাচে ৯০ প্লাস স্ট্রাইক রেট ধরে রেখেছেন। কোনো কোনো ম্যাচে দেড়শ’র ওপরে স্ট্রাইক রেটও ছিল। ইয়াসিরের ব্যাটিংয়ের এই দিকটি বেশি ভালো লেগেছে জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেলের। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর দৃষ্টিতে, ‘ও খুব সাহসী ব্যাটসম্যান। বল নষ্ট করে কম। অনেক মেরে খেলে। বিপিএলের পর ঢাকা লীগে যেভাবে খেলছে, তাতে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মতো একজন ব্যাটসম্যান সে।’
পেসার শফিউল ইসলামের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে চলে আসাটাও বেশ আলোচনায় এসেছে। ঢাকা লীগে মোহামেডানের হয়ে মোটামুটি ভালো বোলিং করছেন তিনি। গত বিশ্বকাপে খেলতে না পারার আক্ষেপ এবার হয়তো ভুলতে পারেন শফিউল। ফিটনেস পরীক্ষা দিয়ে জাতীয় দলে ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাসকিনকে। শুধু নেটে বল করতে পারলেই ডানহাতি এ পেসারকে দলে ফেরাবেন না নির্বাচকরা।
ম্যাচ খেলে নিজেকে ফিট প্রমাণ করতে হবে। পাশাপাশি পারফরম্যান্স দিয়েও দৃষ্টি কাড়তে হবে টিম ম্যানেজমেন্টের। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার লীগে খেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তাসকিন। কারণ বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৩০ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে তাকে দেখাও যেতে পারে।
পেস বোলিং ইউনিটের বাকি সদস্যরা হলেন- মাশরাফি বিন মুর্তজা, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ব্যাটিং লাইনআপে নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা সবাই আছেন। তামিম ইকবালের ওপেনিং জুটি লিটন কুমার দাস। বিকল্প ওপেনার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন সৌম্য সরকার। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ দলের অপরিহার্য খেলোয়াড়।
একমাত্র অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের কাছ থেকে ব্যাটিংটাও পাবে দল। নিউজিল্যান্ডে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপ দলে আগেই জায়গা পাকা করে রেখেছেন সাব্বির রহমান। মিডল অর্ডারে বিকল্প ব্যাটসম্যান হিসেবে ইয়াসির আলীকে রাখা হলেও খেলানো হতে পারে তাকে। আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজেই অভিষেক হতে পারে তার।
নির্বাচক হাবিবুল বাশার এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডকে অভিজ্ঞদের দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আগের যে কোনো বিশ্বকাপ স্কোয়াডের চেয়ে এবার অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বেশি। প্রত্যাশাও তাই বেশি থাকবে। বিশ্বকাপ দল বানাতে এর চেয়ে ভালো খেলোয়াড় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না হয়তো। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের দৃষ্টিতেও এটাই সেরা দল। যে কারণে বেশ আগেই খেলোয়াড়দের নাম ধরে ধরে বিশ্বকাপের সম্ভাব্য স্কোয়াড মিডিয়াকে বলেছিলেন তিনি।