স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুধু সরকারের অনুদানের উপরে নির্ভর করে কোন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না বলে মন্ত্রব্য করেছেন এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেবল সরকারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদের আয় বাড়াতে হবে। কিভাবে আয় বাড়ানো যায়, তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত শক্তিশালী হবে না। সেইসাথে প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাবলম্বীও হতে পারবে না। তিনি ৩ এপ্রিল বুধবার দুপুরে শেরপুর পৌরসভার ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সমাপনী অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিনে শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্ক মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওই কথা বলেন।
এলজিআরডি মন্ত্রী ভালো সেবা পেতে ও উন্নত জীবন-যাপন করতে নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, দেশের সকল পৌরসভাকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শুধু প্রকল্প নিলেই চলবে না, এর বাস্তবায়ন করতে হলে সকল পৌর নাগরিকদের একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ্য ব্যবস্থার উপর বর্তমান সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ কৃষক যেন তার উৎপাদিত ফসল দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে ন্যায্যমূল্য পায়। দেশের বৃহত্তর তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য ১শটি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে।
মন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন ফিরিস্তির অংশ বিশেষ উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করেছিল। ঠিক ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশকে আজ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ একটি মডেল দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিলো ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াট, আর এখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২২ হাজার মেগাওয়াট। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ্ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের কোন বাড়ি বিদ্যুৎবিহীন থাকবে না। তিনি বলেন, সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করার জন্য বিনামূল্যে পাঠ্য বই বিতরণ করছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এছাড়া প্রতিটি জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও আইটি পার্ক স্থাপনের জন্যও কাজ চলছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সাংসদ ও হুইপ আতিউর রহমান আতিক শেরপুর জেলাকে একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে রূপান্তরিত করতে রেল লাইন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, শেরপুর-ময়মনসিংহ সড়কটি ফোর লেনে উন্নীতকরণ ও শেরপুর পৌরসভায় একটি আইটি পার্ক নির্মাণের দাবি চলে আসছে উল্লেখ করে এলজিআরডি মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এখানকার ৩টি নির্বাচনী এলাকায় বার বার নৌকার প্রতি সমর্থন দিয়ে এলাকার জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে শেরপুর আওয়ামী লীগের ঘাটি। এখানে কোন জঙ্গীবাদের স্থান নেই।
শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁন, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এটিএম জিয়াউল ইসলাম, পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি। ওইসময় খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল্লাহ, শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ছারওয়ার জাহান, ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম, নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান লেবু, শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম, নালিতাবাড়ী পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বাক্কারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিবশঙ্কর কারুয়া শিবু ও করুণা দাস কারুয়া। অনুষ্ঠানে শুরুতে আদিবাসী নারীরা নৃত্য ও গান গেয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান।
