ads

বৃহস্পতিবার , ১৪ মার্চ ২০১৯ | ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে জনগণের কষ্ট থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
মার্চ ১৪, ২০১৯ ৬:৫৭ অপরাহ্ণ

শ্যামলবাংলা ডেস্ক : দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আর্তমনবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য দেশের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে দেশের জনগণের আর কষ্ট থাকবে না। বৃহস্পতিবার কুমুদিনী ট্রাস্ট কমপ্লেক্সে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রণদা প্রসাদ সাহা আমাদের দেশের নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানোর থেকে শুরু করে মানবতার সেবার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার আমাদের দেশে অনেক বিত্তশালী আছেন, তারাও করতে পারে। তাহলে আমাদের দেশের মানুষের আর কোন কষ্ট থাকবে না।’ জাতির পিতার ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ব্যাপকভাবে মানুষের জন্য কাজ করেছিলেন, তিনি বিধবাদের জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি শুধু মানুষের সেবা করার জন্য এবং মানুষকে মানুষের মত বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিরাট এক কর্মযজ্ঞ গড়ে তুলেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রণদা প্রসাদ দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তায় তিনি বাংলার অন্যতম ধনী হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। তবে, অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়ার পরও তিনি ভোগ-বিলাসে ডুবে যাননি। বরং অর্জিত অর্থ মানবকল্যাণে ব্যয় করেছেন।
নারী শিক্ষার প্রসারে রণদা প্রসাদের ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি একে একে ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী কলেজ এবং পিতার নামে দেবেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনি আর্থিক সহায়তা দেন।
গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা— পিআইডি
তিনি বলেন, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরবর্তী প্রজন্ম প্রতিষ্ঠাতার মানবিক প্রয়াস- প্রান্তিক অসহায় জনপদে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও নারী শিক্ষা প্রসারে নিজেদের নিবেদিত রেখেছেন। ট্রাস্টের সেবা কর্মযজ্ঞে যুক্ত হয়েছে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও কলেজ এবং রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়। অনগ্রসর মানুষের কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুমুদিনী ট্রেড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট।
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) ৮৬ বছর কার্যকাল পূর্তি উপলক্ষে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে এ বছরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। তারা হলেন– গণতন্ত্রের মানসপুত্রখ্যাত তদানিন্তন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (মরণোত্তর), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), ভাষা সৈনিক ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহবুদ্দীন আহমেদ। সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে শেখ রেহানা এবং জাতীয় কবির পক্ষে কবির নাতনী খিলখিল কাজী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।
কুমুদিনী কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কুমুদিনী কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা ও পরিচালক শ্রীমতি সাহা। অনুষ্ঠানে রণদা প্রসাদ সাহার জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। জাতীয় সংগীত এবং দেশাত্বরোধক গানের মধ্য দিয়ে শুরু এই অনুষ্ঠানে ভারতেশ্বরী হোমসের মেয়েরা বর্ণাঢ্য ডিসপ্লে প্রদর্শন করে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্যবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিকগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কুমুদিনী ট্রাস্টের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত সেবামূলক কাজের তথ্য তুলে ধরে এই ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহার নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজিব এবং ট্রাস্টের যে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য তার দরজা সব সময় খোলা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার অনুজ প্রতীম রাজিবের আরও ইচ্ছা আছে এই ট্রাস্টের কর্মকাণ্ডকে সম্প্রসারিত করার। কাজেই সে যা করবে তাতেই আমাদের সহযোগিতা পাবে। জনগণের সেবা করার জন্য কুমুদিনী ট্রাস্টের মাধ্যমে যে কাজগুলো তারা করে যাচ্ছেন তার প্রতি সবসময় আমাদের সহযোগিতা থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, তার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গুণীজন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের এবারের রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদকে ভূষিত হওয়ায় তাদেরকে আভিনন্দন জানান। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী’র ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর তার বাবার পদক গ্রহণের জন্য বাংলাদেশে আসার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর তার আকস্মিক প্রয়াণে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদকে যারা ভূষিত হলেন তারা সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র।’ তিনি রণদা প্রসাদ সাহার পরিবারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের পারিবারিক যোগসূত্রের কথা স্মরণ করতে গিয়ে ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ও ভাষণে টেনে এনে বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েই কিন্তু আমার যাত্রা শুরু। আমি বাবা-মা সব হারিয়ে যখন এই মাটিতে ফিরে আসি তখন আমার চারিদিকে ছিল শুধু অন্ধকার। শুধু একটাই আলোক বর্তিকা পেয়েছিলাম, বাংলাদেশের জনগণ। সেই জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা পেয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে বাবার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমার বাবা এই বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য সারা জীবন যে ত্যাগ স্বীকার করে গিয়েছেন, তারই পাশে থেকে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন আমার মা (শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব)। তাদের কথা সব সময় মনে রেখেছি যে, আমার বাবা কি করতে চেয়েছিলেন, যা তাকে ঘাতকের বুলেট করতে দেয়নি। তার সেই অসমাপ্ত কাজের একটু যদি করতে পারি তবে সেটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।’
‘বাংলাদেশকে আজ আর কেউ দরিদ্র দেশ বলে অবহেলা করতে পারে না এবং করুণার চোখে দেখে না’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বরং সারাবিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে।’
তার সরকারের টানা দুই মেয়াদের শাসনে দেশের উন্ননের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে গত ১০ বছরে আমরা এই পরিবর্তন সর্বত্র আনতে পেরেছি। কাজেই এই বাংলাদেশকে আরো অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং এই সমাজ ও দেশকে গড়ে তুলতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের শিশু আগামী দিনে দেশের কর্ণধার হবে। তাদের জন্য একটা সুন্দর জীবন ও ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে চাই।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে দিনব্যাপী টাঙ্গাইল সফরে মির্জাপুর হেলিপ্যাডে পৌঁছলে জেলা পুলিশ প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে প্রধানমন্ত্রী কুমুদিনী কমপ্লেক্স থেকে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে জেলার ৩১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
আরপি সাহা নামে পরিচিত রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন একজন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। তিনি তার সব সম্পদ দেশ ও মানুষের জন্য দান করেছেন। ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী উইমেনস মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী হাসপাতাল, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমুদিনী নাসিং স্কুল ও কলেজ, টাঙ্গাইল কুমুদিনী গার্লস কলেজ, মির্জাপুর ডিগ্রী কলেজ, মির্জাপুর এস কে পাইলট বয়েজ অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুল, মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন আরপি সাহা।
১৯৭১ সালের ৭ মে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আরপি সাহা ও তার একমাত্র ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। কুমুদিনী পরিবার এই মহান দানবীরের নামে ২০১৫ সালে রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক প্রবর্তন করে।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, সংসদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর সচিবগণসহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!