স্টাফ রিপোর্টার : বাংলার ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা বসেছিল শেরপুরে। ১১ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে শেরপুর পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের নবীনগর মহল্লার ফসলি জমির মাঠে বসেছিল ওই মেলা। স্থানীয় নবীনগর এলাকাবাসী প্রায় দীর্ঘদিন যাবত ওই মেলার আয়োজন করে আসছে।
মেলায় বিভিন্ন পিঠা, মিষ্টি, সাজ, মুখরোচক খাবারসহ বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন মজাদার খাবারের পসরা বসে। এছাড়া শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মাটির তৈরী বিভিন্ন আসবাবপত্র, মেয়েদের প্রসাধনী ও চুড়ি-মালার দোকানের পসরাও সাজিয়ে বসে দোকানীরা। বেচা কেনাও চলে বেশ। মেলায় গ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিড় জমায়।
এদিকে মেলার আশেপাশে স্থানীয় গ্রামবাসীর ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েশ খাওয়ার উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে প্রতি বাড়িতেই দুর-দুরান্তের আত্মীয়রা ছুটে আসে পিঠা খেতে এবং মেলা দেখতে। একসময় বাঙ্গালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে পূর্ব পুরুষদের রেওয়াজ অনুযায়ী গ্রামের মানুষ ভোরে উঠে হলুদ ও সর্ষে বাটা দিয়ে গোসল করতেন এবং বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত থাকেন পিঠা-পায়েস তৈরীতে। দিনব্যাপী চলতো অতিথি আপ্যায়ন এবং বিকেলে ছুটে যেতেন গ্রামের মেলার মাঠে।
তবে এখন হলুদ সর্ষের রেওয়াজ আর না থাকলেও অনেক বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ও পিঠা উৎসবের রেওয়াজ রয়েছে। জেলার বাইরে অবস্থানরত নারী-পুরুষের অনেকইে এ মেলা উপলক্ষে শেরপুর চলে আসেন। বিবাহিত মেয়েরা বাবার বাড়িতে নাইয়র বা বেড়াতে আসে এ মেলা উপলক্ষে। শহরের অদূরে এবং পৌর এলাকার মধ্যে এ মেলার আয়োজন করা হলেও কোন রকম প্রচারণা চালানো ছাড়াই উপচে পড়া ভিড় থাকে এ মেলায়। কত বছর পূর্বে এ মেলার প্রচলন হয়েছিল তা কেউ সঠিক করে বলতে না পারলেও প্রায় একশ বছরের উপরে বলে স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ ও গ্রামবাসী মনে করেন।
এ মেলা মূলত ৩০ পৌষ ১৩ জানুয়ারি অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তি মেলা হলেও এবার মেলার স্থানে কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ করার জন্য মাঠ তৈরী প্রস্তুতি’র জন্য মেলার তারিখ ২ দিন আগে নির্ধারণ করা হয়। মেলায় প্রতি বছর অন্যতম আকর্ষণ ঘোড় দৌড়ের পাশপাশি কুস্তি খেলা ও বাইসাইকেল রেস হলেও এবার র্যাফেল ড্র ও মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া এক সময় এ মেলা মাত্র ৪ ঘন্টার জন্য বসলেও এবার রাত অবধি মেলা চলবে বলে মেলা আয়োজকরা জানায়। দিনদিন এ মেলার আকর্ষন ও লোক সমাগমও বাড়ছে বলে আয়োজকরা জানায়।
এবার শেরপুর জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসেন ২০ জন ঘোড় সওয়ার। কুস্তি খেলায় অংশ নেন ২০ জন খেলোয়াড়। এছাড়া মিউজিক্যাল চেয়ার ও সাইকেল রেসে অর্ধশত খেলোয়ার অংশ নেন।