জাহিদুল খান সৌরভ, শেরপুর ॥ কয়েক বছর আগের কথা, শখ করে বাজার থেকে ২ জোড়া দেশীয় জাতের কবুতর কিনে বাড়িতে আনেন ওয়াহিদুল খান দ্বীপ। দুই জোড়া কবুতর যখন একে একে বাচ্চা তুলতে শুরু করল দ্বীপের মন খুশিতে ভরে গেল। তিনি একজোড়া কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করলেন ১৮০ টাকা। তখন তিনি ভাবলেন কবুতর যদি বাণিজ্যিকভাবে পালন করা যায়, তাহলে তো বেশ লাভ হবে।
যেই ভাবনা সেই কাজ। বাড়ির উঠোনের উত্তর পাশে সে তৈরি করল একটি কবুতরের খামার। তার খামারে আছে ঝর্না শারিং, গিয়াজুলি, সোয়া চন্দন, রেসার, রেড চেকার, গলা কষা, কালদম, টিকলি মুজা, শটপিছ, আউল, জালালি, গিরিবাজ ও কাগজিসহ দেশী-বিদেশী প্রায় ১৫/১৬ জাতের কবুতর। এছাড়া তার খামারেই রয়েছে কবুতরের সব-ধরনের ঔষধ ও ভ্যাকসিন।
ওয়াহিদুল খান দ্বীপ শেরপুর পৌরসভার কসবা কাঠগড় এলাকার মোঃ লিয়াকত আলী খান বাবুলের ছোট ছেলে। ইতোমধ্যে তিনি শেরপুর সাইন্স এন্ড টেকনোলজি কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ে ডিপ্লোমা শেষ করেছেন। সরেজমিনে দ্বীপের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বড় একটি টিনের ছাউনির ঘর। চারপাশে তারের নেট দিয়ে ঘেরা ভেতরে বসানো হয়েছে কাঠের তৈরী অর্ধশত কবুতরের খোপ।
আকারে বড় কবুতরগুলোর জন্য রয়েছে আলাদা খাঁচা। নিচে দেওয়া আছে খাবার, স্বচ্ছ পানি ও কবুতরের জন্য গোসলের জন্য তৈরি ছোট্ট হাউজ। সেখান থেকে কবুতরগুলো তাদের প্রয়োজন মত খাবার, গোসল সেরে বসছে নিজ নিজ কামরাতে। কেউ সকালের রোদে শরীরটাকে বিছিয়ে দিয়ে রোদ পোহাচ্ছে, কেউ নিজের বাচ্চাকে খাইয়ে দিচ্ছে, কেউবা বাসায় বসে ডিম তা দিচ্ছে। দেশী-বিদেশী নানা জাতের নানান রঙের কবুতর গুলো ঘরের মধ্যে ভিন্ন স্বরে বাক-বাকুম ডাকে পুরো বাড়িটিকে সবসময় মাতিয়ে রাখছে।
দ্বীপ জানান, ছোট বেলা থেকেই কবুতর পালনে শখ ছিল তার। তাই সে শখ হিসেবে একদিকে যেমন কবুতর পালন করছে অন্যদিকে তা থেকে টাকা আসত, যা দিয়ে তার পকেট খরচটাও সহজেই চলে যেত। তিনি বলেন, ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কবুতর সংগ্রহ করি। শীত মৌসুমটা কবুতরের জন্য খারাপ সময়। এ সময় কবুতরের ঘর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। তা না হলে রোগ-জীবাণু ছড়ায়। প্রতি ৩ মাস পরপর প্রতিষেধক হিসেবে কবুতরগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
দ্বীপ আরও জানান, এখন প্রতি জোড়া দেশী কবুতরের বাচ্চার দাম ১৬০-১৮০ টাকা এবং বিদেশী কবুতরের বাচ্চার দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। এছাড়াও তার বাড়িতে বিভিন্ন জাতের ঘুঘু, টিয়া, লাভ বার্ড পাখিও রয়েছে। দ্বীপ জানান, আগামীতে তার কবুতরের খামারটি আরও বড় করার চিন্তা রয়েছে। পরিবারের সবাই এখন তাকে এ কাজে যথেষ্ট সহযোগিতাও করছেন।