জাহিদুল খান সৌরভ, শেরপুর : দিগন্তে হালকা কুয়াশার রেখা দেখা দিয়েছে। খেজুর গাছের মাথার আস্তরণ তুলে তাতে মাটির ভাড় টানাতে শুরু করেছে গাছিরা। এমন দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় শীত আসছে।সঙ্গে সঙ্গে আসছে খেজুর রসও। শীতের সকালে কাঁপা কাঁপা হাতে খেজুরের ঠান্ডা রস পানের মধুর দৃশ্যও মনে করিয়ে দেয় শীতকালের আমেজ। প্রকৃতির নিয়ম মেনে এবারও শীত আসছে।গাছিরা মাটির ভাড় নিয়ে ছুটছে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য। শীতের সকালে রসের পায়েস ছিল নিত্যদিনের খাবার।
কিন্তু সেসব স্মৃতি এখন আর তেমন চোঁখে পরে না শেরপুর জেলার কোথাও। মাত্র কয়েক বছর পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যেত শীতকালে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে পিঠার উৎসব হতো। পিঠা উৎসবের প্রধান উপকরণ চাউলের গুড়া ও
দ্বিতীয়ত খেজুরের রস বা গুড়। পুরনো গাছি আর শেরপুরের গ্রাম গুলোতে খেজুর গাছ কম থাকায়, সে সব দৃশ্য আজ বিলুপ্তপ্রায়। বর্তমানে সারা জেলা শহরের গ্রাম গুলোতে খুঁজলেও একজন গাছি মেলাও যেন কষ্টকর।
সদর ইউনিয়ন লছমনপুর গ্রামের স্থানীয় লোকজন জানান, এখানকার রাস্তার পাশের খেজুর গাছ বিলীনের অন্যতম কারণ বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ। এ সময় খেজুর গাছগুলো কাটা পড়ছে। অন্যদিকে রাস্তার পাশে শিল্প প্রতিষ্ঠান আর বাসা-বাড়ি গড়ে উঠছে। আবার এক শ্রেণির লোকেরা খেজুর গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। সবমিলিয়ে খেজুর গাছ নিধনে প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। তাই এসব প্রতিযোগীতায় শেরপুরের খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়ার প্রধান কারণ।
বাংলার ঐতিহ্যের সূচী থেকে এভাবে লোভনীয় বস্তুটি এত দ্রুত হারিয়ে যাবে কেউই তা মানতে নারাজ। কার্তিক,অগ্রাহায়ন শেষ হয়ে পৌষ মাস চললেও কোথাও কোনো খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের ছবি চোখে পড়ে না। এটি এখন চরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি গ্রামে তথ্যচিত্র প্রায় একই রকম।
এ সম্পর্কে লছমনপুর ইলশা গ্রামের এলাকার এক সময়কার নামকরা গাছি আব্দুল মাজেদ (৭০) বলেন, ‘এখন শীতের সময় খেজুর রস নেই এটা বিশ্বাস করতে পারি না। খেজুর গাছ কাটার পিছনে জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটিয়েছি।
তাই এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রতি বছর বৃক্ষরোপনের সময় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খেজুর গাছ রোপনের উপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশ প্রেমিদের দাবি, খেজুর গাছ রক্ষায় সবারই এগিয়ে আসা জরুরী। নতুবা চিরতরে হারিয়ে যাবে আমাদের বাঙালীর ঐতিহ্য খেজুরের রস।




