ময়মনসিংহে ট্যুরিজম কর্মশালায় জি.এম সালেহ উদ্দিন
মোঃ নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ ॥ মহুয়া-মলুয়া, চন্দ্রবতী, জারি-সারি, ঘাটুগান, ভাটিয়ালী গান খ্যাত সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা, পাহাড়-নদী-হাওর বিধৈত, জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বাল্যস্মৃতি বিজড়িত, বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নূল ও রাজা-জমিদারদের বাড়ি ও পুরাকীর্তি স্মৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ময়মনসিংহ বিভাগের অপার সৌর্ন্দয্য পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক সম্পদই রয়েছে। রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, পর্যাপ্ত আবাসন, পয়:নিষ্কাশন ও নিরাপত্তা সুবিধা দেয়া হলে এবং প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি পেলে এ অঞ্চল পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে এবং প্রতিবছর দেশী-বিদেশী লাখ লাখ পর্যটক এ অঞ্চলে ভ্রমণে আসতে পারেন। এ অঞ্চলের পর্যটনের সম্ভাবনা এবং বিভিন্ন সমস্যার উত্তরণসহ দুর্গাপুর পর্যন্ত ট্রেন লাইন সম্প্রসারণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশমালা প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের পর্যটন বিকাশে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কৃষিবিদ জি.এম সালেহ উদ্দিন জানিয়েছেন। এছাড়াও বক্তারা জানান, পর্যটন বিকাশে হোটেল-মোটেল নির্মাণ, পর্যটন স্পট উন্নয়নসহ পর্যটন শিল্পে উদ্যোক্তাদের অতি অল্প সূদে এবং সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ সুবিধা দেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানানো হয়। এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন পর্যটন স্পট নিয়ে ৩/৪ দিনের একটি প্যাকেজ ট্যুর প্রোগাম তৈরী করার জন্য সরকারী ও বেসরকারি সংস্থার প্রতি আহবান জানানো হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ পৌরসভার অডিটরিয়ামে ময়মনসিংহ বিভাগীয় পর্যায়ে ট্যুরিজম সম্পর্কে জনসচেতনতা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কৃষিবিদ জি.এম সালেহ উদ্দিন বলেছেন, নেত্রকোণার দুর্গাপুর পর্যন্ত ট্রেন লাইন সম্প্রসারণ করা হলে পর্যটনে যুগান্তকারী দুয়ার খুলে যাবে। সেখানে রয়েছে ক্ষুদ্র নানা নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি, গারো ও সাদামাটির পাহাড়-নদী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। যা পর্যটকদের মনমূগ্ধ করবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহযোগিতায় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় আয়োজিত ময়মনসিংহের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রেঞ্জ ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচারক মোঃ আব্দুল আলীম, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক মঈনুল ইসলাম, জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যোজিস্ট্রেট মোহাম্মদ কবির উদ্দীন, ট্যুরিজম বোর্ডের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. একেএম জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমান, ময়মনসিংহ ট্যুরিজম ক্লাবের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শরীফ উদ্দিন, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, নেত্রকোণা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান, জামালপুর লুইস পার্কের এমডি লুইস আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় বক্তরা জানান, পর্যটকদের আকর্ষনের জন্য ময়মনসিংহ জেলায় রয়েছে শশী লজ, গৌরীপুর লজ, আলেকজান্ডার ক্যাসেল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, স্বাধীনতাস্তম্ব, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী পার্ক, ময়মনসিংহ জাদুঘর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃগত্তম জার্মপ্ল্যাজম সেন্টার, বোটানিক্যাল গার্ডেন, নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র, মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি, মহারাজ সূর্যকান্তের বাড়ি, গৌরীপুর রাজবাড়ি, বীরাঙ্গনা সখিনার মাজার, রামগোপাল জমিদার বাড়ি, ফুলবাড়িয়া অর্কিড বাগান, চীনা মাটির টিলা, আবদুল জববার স্মৃতি জাদুঘর, কুমিরের খামার, তেপান্তর ফিল্ম সিটি।
জামালপুর জেলায় রয়েছে হজরত শাহ জামালের (রহ.) মাজার, হজরত শাহ কামালের (রহ.) মাজার, পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট রসপাল জামে মসজিদ (উনবিংশ শতাব্দী), নরপাড়াা দুর্গ (ষোড়শ শতাব্দী), গান্ধী আশ্রম, দয়াময়ী মন্দির, দেওয়ানগঞ্জের সুগার মিলস, লাউচাপড়া পিকনিক স্পট, লুইসপার্ক।
নেত্রকোনা জেলায় রয়েছে উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী, বিজয়পুর পাহাড়ে চিনামাটির নৈসর্গিক দৃশ্য, রানীখং মিশন, টংক শহীদ স্মৃতিসৌধ, রানীমাতা রাশমণি স্মৃতিসৌধ, কমলা রানী দীঘির ইতিহাস, নইদ্যা ঠাকুরের (নদের চাঁদ) লোক-কাহিনী, সাত শহীদের মাজার, হজরত শাহ সুলতান কমরউদ্দিন রুমির (রহ.) মাজার, রোয়াইলবাড়ি কেন্দুয়া।
শেরপুর জেলায় রয়েছে গড় জরিপার দুর্গ, দরবেশ জরিপ শাহের মাজার, বারদুয়ারী মসজিদ, হযরত শাহ কামালের মাজার, শের আলী গাজীর মাজার, কসবার মুগল মসজিদ, ঘাঘরা লস্করবাড়ী মসজিদ, মাইসাহেবা মসজিদ, নয়আনী জমিদারের নাট মন্দির, আড়াইআনী জমিদারবাড়ি, পৌনে তিনআনী জমিদার বাড়ি, গজনী অবকাশ কেন্দ্র, মধুটিলা ইকোপার্ক ইত্যাদি।
