সাওমের শিক্ষা
মাহে রমাদান দিচ্ছে ডাক
বিলাস-ব্যসন নিপাত যাক,
মাহে রমাদানের চেতনা
সিয়াম-সংযম সাধনা।

সাহরি খাবে,ইফতার খাবে,
সারা দিবস উপোস রবে,
এইটুকু নয় যথেষ্ট।
কথায় কাজে নম্র হবে,
আচরণে সুশীল রবে,
হবে না কেউ অতিষ্ঠ।

খোদার ডরে রোজা করো,
ন্যায়-নিষ্ঠতার ঝাণ্ডা ধরো,
তৃপ্তি পাবে তোমার মন।
কাম-ক্রোধ আর হিংসা ছাড়ো,
নিজের কাজের বিচার করো,
এই দুনিয়া কতক্ষণ?
আপনজনার মনকে বুঝো,
আপন-গৃহে স্বর্গ খোঁজো,
তবেই পাবে স্রষ্টার মন।
রোজার সুফল পেতে হলে
মনকে পোড়াও ভয়ানলে,
মন করোনা উচাটন।
নিজের ভুলকে শুধরে নিয়ে,
বিশুদ্ধতার শপথ নিয়ে,
এগিয়ে চলো অভাজন।
কবি আইনুদ্দিন
আইনুদ্দিনের কষ্ট অনেক
শোনার কেহ নেই,
যার কাছেই সে বলতে বসে
কেটে পড়ে সেই।
শৈশবে সে মগ্ন ছিল
প্রতিবেশির প্রেমে,
আঁকত তাহার হাজার ছবি
নানান রঙের ফ্রেমে।
স্বপ্ন ছিল ঘর বাঁধিবে
সঙ্গে তাকে নিয়ে,
দু’জনের দুই ভুলের ফাঁদে
আর হলো না বিয়ে।
আইনুদ্দিন এক কঠিন মানুষ
কষ্ট গেলেন চেপে,
তার প্রেমিকার এক বান্ধবী
ধরল তাকে ঝেপে।
আইনুদ্দিনের মনের ঘরে
কাটল সে এক সিঁধ,
স্বপ্ন দেখায় বেঁধে দিতে
ভালোবাসার ভিত।
তাকে নিয়ে করছে এখন
সুখ-দুঃখের ঘর,
এক বান্ধবীর শূণ্যস্থানে
আরেকজন অনড়।
এমনি করেই আইনুদ্দিনের
দিন কাটছে বেশ,
প্রতিবেশির প্রতিও তার
প্রেম হয়নি শেষ।
প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে আজি
আইনুদ্দিন এক কবি,
কবিতায় তার উঠে আসে
অতীত দিনের ছবি।
যুগের দাবি পূরণ করতে
ফেসবুকে হন যুক্ত,
এখন দেখে অবাক হয়ে
ফেসবুক অনেক মুক্ত।
ফেসবুকেও তার বন্ধু অনেক
মনের মত ক’জন,
একজন আছে সর্বসেরা
যেন চির আপন।
পারমিতার পণ
কবির কথায় কষ্ট পেয়ে
করেছে পণ পারমিতা,
মনে মনে মান করেছে
এবার সাজবে শরমিতা।
বুকে বেজায় কষ্ট তাহার
যখনই যায় ফেসবুকে,
কমবখত এক কবির লেখায়
খোঁচা লাগে তার চোখে।
কবি তো নয়, কাক একটা
কা কা করে নিশিদিন,
দেখলে তাহার লেখার ছিরি
গা করে তার ঘিনঘিনঘিন।
পেলে দেখা কবি ব্যাটার
মিটিয়ে নেবে মনের ঝাল,
টেনে ছিঁড়বে কানদু’টো তার,
রাঙিয়ে দেবে ফর্সা গাল।
ভাবতে গিয়ে ঘুমের ঘোরে
স্বপ্ন দেখে পারমিতা,
কবির মুখে আগুন দিয়ে
জ্বালছে জোশে তার চিতা।
ঘুম ভাঙলে মনে মনে
স্থির করে তার গন্তব্য,
পড়ে লেখা কবি ব্যাটার
আর করবে না মন্তব্য।
এ কেমন প্রেম?
তবুও আমি তোমায় ভালোবাসি।
তোমার সন্দিহান চোখ আমার রক্ষাকবচ,
তোমার অবিশ্বাসী মন আমার সততার পরীক্ষা,
তোমার মিথ্যে-প্রেম আমার চলার পথের পাথেয়।
আমি অযোগ্য ছাত্র তোমার,মাথায় গোবর-ভরা,
তোমার পাঠশালায় পড়েও আমি শিখতে পারিনি
কারো প্রেমে পড়লে তাকে অবিশ্বাস করতে হয়,
কাউকে ভালোবাসলে কিভাবে সন্দেহ করতে হয়,
বাক-চাতুর্যে কিভাবে আড়াল করতে হয় নিজের দোষ!
তাই তো আমি অকৃতকার্য হই বার বার তোমার কাছে
কেবল তোমাকে কোনো পরীক্ষাই দিতে হয় না কখনো।
তোমার অবহেলা,অবিশ্বাস,ঘৃনা,সন্দেহ, কূপমন্ডুকতা
একেকটি যেন তোমার অঙ্গে পরা নানা রকম অলঙ্কার।
অথচ আমি জানি,তোমার হাসিতে কপটতা আছে,
তোমার মুখের কথায় আছে মেকি বাগাড়ম্বরতা,
মায়াবী চাহনির আড়ালে নীতিহীন কৌতুহল
যা বার বার তোমাকে বিব্রত করে,ছোট করে,
বিবস্ত্র করে আমার সামনে,আমি করি না-দেখার ভান
আর তুমি? পরম স্বস্তিতে আবার শুরু করো পুরোনো খেলা নতুন করে,নব-উদ্যমে,ক্লান্ত হওনা কখনো।
আমার সরলতা তোমায় সুযোগ করে দেয়,
আমার বে-আক্কেলপনা তোমায় সাহস যোগায়,
আমার মোটা-মাথা তোমায় ক্ষমা করে বার বার।
এ কি আমার ভুল? নাকি দুর্বলতা? কী ভাবো তুমি?
আমি কিন্তু জানি,এ আমার নিখাঁদ প্রেম তোমার প্রতি,
হয়তো যার যোগ্য নও তুমি মনের দিক থেকে,
তবুও আমি তোমায় ভালোবাসি, পাগলের মত।
পরমানন্দপুর
সত্যি বলছি,করছি না মিথ্যে সুনাম,
যেথা জন্ম আমার সে তো গ্রাম নয়
যেন এক আনন্দ ধাম,
সবুজে ঘেরা,ফুল-ফসল ভরা
পরমানন্দপুর নাম।
এখানে যারা করে বসবাস
সুখে থাকে বারোমাস,
স্বার্থের লোভে কখনো কেহ
করে না কারো সর্বনাশ।
এখানে বর্ষায় ঝিনাইয়ের জলে
ধরে না না মাছ জেলে-গাঙচিল মিলে,
ছিপের বড়শি কিংবা সুঁতার জাল ফেলে।
এখানে কেহ পড়লে শয্যায়
রোগের যন্ত্রনায়,
পাড়া-প্রতিবেশি সবাই মিলিমিশি
সেবার হাত বাড়ায়।
এখানে সোমত্ত কন্যার দায়ে
পড়লে গরিব ঘর,
সকলে মিলে চাঁদা দিয়ে হলেও
জুটিয়ে দেয় তার বর।
এমন সুন্দর গ্রাম যেখানে
যন্ত্রনাও কিছু কম নহে, বাছা,
এখনো এ গ্রামে প্রবেশের পথ
রয়ে গেছে ভাঙ্গা-কাঁচা।
গ্রীষ্ম-বর্ষায় কাঁচা রাস্তায়
রিক্সা, অটো-ভ্যান নাহি যেতে চায়।
কেউবা যদি কভূ রাজি হয়
তিনগুন বেশি ভাড়া দিতে হয়।
তবু আমরা পাড়া-প্রতিবেশি
আছি তো সুখেই বেশ,
নেই তো হেথা মামলা-মোকদ্দমা
ঝগড়া-ঝাটির লেশ।
