স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেরপুরে মেধাবী কলেজছাত্রী ও তরুণী গৃহবধূ আশরাফুন্নাহার লোপাকে নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর মামলায় কেবল প্রধান আসামী যৌতুকলোভী পাষন্ড স্বামী ডিএমপি পুলিশের এসআই শাহিনুল ইসলাম শাহিনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। ১৬ জুলাই রবিবার দুপুরে নানা নাটকীয়তা ও লুকোচুরির আশ্রয়ে ওই অভিযোগপত্র দাখিল ও কোর্ট পুলিশের দপ্তরে গ্রহণের বিষয়টি আদালত থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। অভিযোগপত্রে মামলার অপর ৫ সহযোগী আসামী এসআই শাহিনের ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান, মা ছাহেরা বেগম, বোন মনোয়ারা বেগম এবং দুই ভাবি মেরিন আক্তার ও নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার কথা উল্লেখ করে তাদের অব্যাহতির আবেদন জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আকতারুজ্জামান। অন্যদিকে প্রধান আসামী ব্যতীত সহযোগী অপর ৫ আসামীকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্যাতিতা লোপার পরিবার, মানবাধিকার কমিশন, মহিলা পরিষদ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সচেতন মহল।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, তদন্তে নানা নাটকীয়তার পরও ১০ জুলাই সোমবার বাদীপক্ষকে না জানিয়ে লুকোচুরি ও গোপনীয়তার আশ্রয়ে শ্রীবরদী জি,আর আমলী আদালতে দাখিলের উদ্দেশ্যে কোর্ট পুলিশের দপ্তরে ওই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান আসামী এসআই শাহিনের আত্মসমর্পণের প্রেক্ষিতে জামিনের বিষয়ে শুনানীকালেও ওই অভিযোগপত্র নথিতে শামিল করা হয়নি। পরে ওইদিন বিকেলে তা নথিতে শামিল করা হলেও রহস্যজনক কারণে তা গোপন রাখা হয়। অভিযোগ উঠেছে, কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক বদিউজ্জামান ওই অভিযোগপত্র গ্রহণের পরপরই তা নথিতে না দিয়ে নিজের হেফাজতে রেখে দিয়েছিলেন এবং তার কথাতেই ওই গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে। সেইসাথে মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখের আগেই তা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্যও চালানো হয়েছে বিশেষ তোড়জোর। রবিবার বিকেলে অভিযোগ অস্বীকার করে কোর্ট পরিদর্শক বদিউজ্জামান বলেন, অভিযোগপত্র ১০ জুন হাতে পেলেও সংশ্লিষ্ট জিআরও’র অনভিজ্ঞতার কারণে তা নথিতে শামিল হয়নি। এখন অভিযোগপত্র মূল নথিতে শামিল হয়েছে এবং তা পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ধার্য তারিখেই বদলি হবে।
অন্যদিকে মূল আসামী ব্যতীত অপর ৫ সহযোগী আসামীকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী জয়শ্রী দাস লক্ষ্মী, জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ এবং নির্যাতিতা লোপার মা, মামলার বাদী স্কুলশিক্ষিকা সেলিনা আক্তার লাকীসহ তার পরিবারের লোকজন। লোপার মা অভিযোগ করে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রথম থেকেই পক্ষপাতমূলক আচরণ করে আসছিলেন। তদন্তকালে যেমন আদালতে লোপার জবানবন্দি করানো হয়নি, ঠিক তেমনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লোপার চিকিৎসাসংক্রান্ত সনদপত্রও চাওয়া হয়নি। এছাড়া অভিযোগপত্র দাখিলের পূর্বে তাকে জানানো হয়নি মামলার ফলাফল। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আংশিক নারাজী দাখিল করবেন বলেও জানান।
উল্লেখ্য, শেরপুর শহরের দমদমা মহল্লার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের একমাত্র কন্যা ও সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী লোপাকে পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের বাড়িতে গত ২২ মে রাতে ২০ লাখ টাকার যৌতুকের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অমানসিক নির্যাতন চালায় স্বামী এসআই শাহিন ও তার পরিবারের লোকজন। ওই ঘটনায় শ্রীবরদী থানায় ৫ জুন এসআই শাহিনসহ পরিবারের আরও ৪ সদস্যকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ)/৩০ ধারায় মামলার পর সকলের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ফুঁসে উঠে স্থানীয় মহিলা পরিষদ ও মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
