মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) : ষাটোর্ধ্ব বয়সী মান্নান প্রতিদিন সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত একস্থানে বসে ভিক্ষা করেন। তার ভিক্ষার টাকাতেই দুই ছেলের পড়ালেখাসহ পরিবারের ৪ সদস্যের দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের সংস্থান হয়। মান্নান নকলা উপজেলার চন্দ্রকোণা ইউনিয়নের বালিয়াদী গ্রামের মৃত হুরমুজ আলীর ছেলে। তার ১২ বছর বয়সে হাটুর উপরে একটি টিউমারের আকৃতি দেখা দেয়। ওই টিউমারের চিকিৎসা পরবর্তী অপারেশনের ব্যয় মিটাতে কিছু ১০ শতাংশ কৃষি জমি ছিলো তা বিক্রি করে দেন। তারপর মৌসুমী কাজ করে মাঝখানে কয়েক বছর ভালোই চলছিল। হঠাৎ করে আজ থেকে ২৪ বছর আগে তার সারা শরীরে টিউমারের মতো অসংখ্য গুটি দেখা দেয়। তার মধ্যে বাম হাটুর উপরে টিউমার সদৃশ্য একটি মাংসপিন্ড অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। কোন একসময় সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচার তাগিদে তাকে ভিক্ষা করার রাস্তা বেছে নিতে হয়। বর্তমানে ওই মাংসপিন্ডটির ওজন ১৫ থেকে ১৭ কেজি হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। এখন সে আর হাঁটতে পারে না। মান্নান জানান, সমাজ সেবা থেকে প্রতিবন্ধী একটি ভাতা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদ বা জেলা পরিষদ থেকে আর কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি বা পাচ্ছে না। আপাতত একটি হুইল চেয়ার পেলে তার পরিবারের খুব উপকার হতো। মান্নান নিজের মতো করে বলে ‘আপনেরা আমারে একটা ওইল চিয়ার আইন্না দেওনের ব্যবস্থা কইরা দেইন। আমি অহনা আডবার পাইনা। ইসকা দিয়া ভিক্ষার জাগাত যাওন নাগে। এক জাগাত বইয়া থাইক্কা যাপাই তার অর্ধেক ইসকা ভাড়া দিতেই নাগে। অহন আমার সংসার চলতাছে না। একটা ওইল চিয়ার পাইলে আমার পরিবারের খুব উফকার অইত। ইসকা ভাড়া বাচত, ওই টেহা সংসারের কামে খরচ করবার পাইতাম। দয়া কইরা আমারে একটা ওইল চিয়ার দেইন।’
জানা গেছে, তার ২ ছেলে কৈয়াকুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। স্ত্রী অসুস্থ হয়ে ঘরে বসা। উপজেলা সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, অনেক আগে থেকেই মান্নানের নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করা আছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন মান্নানের ছবিসহ একটি আবেদন তাঁর দফতরে জমা দিতে বলেন। নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব কুমার সরকার বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মান্নানকে হুইল চেয়ার দেওয়াসহ ছেলেদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে প্রাপ্যতা অনুযায়ী তাকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
