শ্যামলবাংলা ডেস্ক : যুদ্ধাপরাধী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। চূড়ান্ত রায়ে এই দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ ১৮ নভেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এই রায় ঘোষণা করেন। দু’জনের ক্ষেত্রেই প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, ‘ডিসমিসড’।
এটি সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চূড়ান্ত আদেশ। এর ফলে দণ্ড কার্যকরে আর আইনি বাধা থাকল না। এখন তাদের সামনে আর একটি সুযোগ আছে, তা হলো রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। এরপর দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি আসবে।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই দুজনের রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। দুই শুনানিতেই আসামিপক্ষে যুক্ত তুলে ধরেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্ত উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দণ্ড কার্যকরে এখন আর কোনো আইনি বাধা নেই। কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্তে সাজা কার্যকর করবে। অবশ্য ক্ষমা প্রার্থণা করলে আলাদা বিষয়।’
বুধবার সকাল ৯টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে রায়ের সময় নির্ধারণ করা হয় সকাল সাড়ে ১১টা।
এরআগে মঙ্গলবার আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ রায় পুনর্বিবেচনার শুনানি শেষ হয়। আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের কার্যতালিকার ২ নম্বরে সকাল সাড়ে ১১টায় বিষয়টি আদেশের জন্য রাখা হয়।
স্বাধীনতার ঊষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং ফরিদপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ একাত্তরের বদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করে। আদালত মুজাহিদের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। পরে এই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে আসামিপক্ষ।
সাকা চৌধুরীর ফাঁসির সাজা বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। এর ১৪ দিনের মাথায় ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন সাকা চৌধুরী।
২০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন চেম্বার আদালত ওই আবেদন শুনানির জন্য ২ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। পরে সাকা চৌধুরীর আইনজীবীর সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির দিন ১৭ নভেম্বর পুনর্নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ।
১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।