শ্যামলবাংলা ডেস্ক : টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপনির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। ২৭ অক্টোবর মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত এ নির্বাচন স্থগিত করেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশনের করা এক আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এ স্থগিতাদেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ২ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
সোমবার বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন নির্বাচন কমিশনের প্যানেল আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. ইয়াসিন খান।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে চিলেন আইনজীবী তৌহিদুর রহমান এবং কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা এ জে মোহাম্মদ আলী। উপনির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় কাদের সিদ্দিকীর ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর গত ১ সেপ্টেম্বর সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে এ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রীসহ ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণ দেখিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা গত ১৩ অক্টোবর বাছাই শেষে কাদের ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকীসহ চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে তিনি ইসিতে আপিল করলে তা ১৮ অক্টোবর খারিজ হয়। এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন কাদের সিদ্দিকী। আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পরদিন ২১ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি অবকাশকালীন বেঞ্চ কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে নির্দেশসহ রুল জারি করেন।
রুলে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিলে ইসির সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কতৃর্ত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ২২ অক্টোবর সব প্রার্থীদের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীকে গামছা প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। হাইকোর্টের এই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সোমবার আপিল বিভাগে ওই আবেদন করে ইসি।
টাঙ্গাইল-৪ আসনে ভোট হওয়ার কথা আগামী ১০ নভেম্বর। কাদের সিদ্দিকী ছাড়া এতে অপর তিন প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী (নৌকা), বিএনএফ এর আতাউর রহমান খান ( টেলিভিশন) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইমরুল কায়েস (আম)। আসনটিতে এর আগে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নৌকা প্রতীকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কাদের সিদ্দিকী দম্পতির মনোনয়নপত্র বাতিলের ঘোষণা দিয়ে গত ১৩ অক্টোবর রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলিমুজ্জামান জানান, অগ্রণী ব্যাংক, টাঙ্গাইল শাখায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থা (প্রাইভেট) লিমিটেড’ এর নামে কাদের সিদ্দিকী ও তার সহধর্মিনী নাসরিন কাদের সিদ্দিকীর ১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকারও বেশি খেলাপি ঋণ থাকায় তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
কাদের সিদ্দিকী ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী এর পরিচালক। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ব্যক্তির ওপরই বর্তায়। ঋণখেলাপি হওয়ায় ২০১৪ সালে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের উপনির্বাচনে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।