শ্যামলবাংলা ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান না করে বাসায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়াকে কেউ অবরুদ্ধ করে রাখেনি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি বাড়ি চলে যাক, কেউ বাধা দেবে না। খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের নেত্রী আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক জায়গায় নাশকতা চলছে। সরকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার তা সবই করবে। তিনি বিশ্ব ইজতেমা চলাকালে অবরোধ কর্মসূচি আহ্বানের তীব্র সমালোচনা করে দেশবাসীকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলে ১২ জানুয়ারী সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দানকালে তিনি ওইসব কথা বলেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি হলেও বিশ্ব ইজতেমার কারণে জনসভার কর্মসূচি দুই দিন পিছিয়ে ১২ জানুয়ারি করা হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের এ জনসভা ঠেকাতে ঢাকাসহ ১৫ জেলায় গতকাল হরতাল আহ্বান করেছিল বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। তাই বিএনপি ও ছাত্রদলের হরতাল-অবরোধের মধ্যে আওয়ামী লীগের এ জনসভাকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রশাসনের প থেকে জনসভা ঘিরে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরাও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে দলীয়ভাবে। এতকিছুর পরও জনসভা ছিল মিছিল-শ্লোগানে মুখরিত। দলীয় নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও নিজ নিজ সংগঠনের স্থানীয় নেতার ছবি এবং ব্যানার নিয়ে জনসভায় যোগ দেন।
শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, কোন স্বপ্নে উনি বিভোর? উনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখবেন, এটা কখনও হবে না। বিশ্ব ইজতেমা হয়ে গেল, হাজার হাজার মুসল্লি এতে অংশ নিয়েছে। বিশ্ব মুসলমানদের দ্বিতীয় জমায়েত এটা। উনি ইসলামের ধ্বজা ধরে থাকেন। তাহলে ইজতেমার সময় অবরোধ করেন কেন? সহ্যেরও একটা সীমা থাকে। সরকারপ্রধান বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস করলে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেললে বরদাশত করা হবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আপনি যে ভুল করেছেন, তার খেসারত আপনাকে ও আপনার দলকেই দিতে হবে। জনগণ কেন এর খেসারত দেবে। জনগণ েেপ গেলে কিন্তু বিপদ হবে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়। দেশের জনগণকে বিএনপির ‘অবৈধ’ অবরোধ প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পাড়ায়, মহল্লায় কারা বোমা বানায় আর কারা বোমা মারে তাদের ধরে পুলিশে দেবেন। শান্তি বিনষ্ট হতে দেবেন না। আমাদের যা যা করা দরকার আমরা তা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নে (আইপিইউ) জয়ী হয়েছি। এ নির্বাচন যদি বৈধ না হতো তাহলে এতগুলো দেশের ভোট বাংলাদেশ পেত না। তিনি বলেন, সারা বিশ্ব বোঝে না, বুঝেন শুধু উনি (খালেদা জিয়া)। আর উনার কুলাঙ্গার পুত্র (তারেক রহমান) যে মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিল আর রাজনীতি করবে না। মানি লন্ডারিং মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি। শেখ হাসিনা বলেন, আর এখন যেমন মা তেমন পুত্র। দেশের মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা তার সরকারের গত এক বছরের নানা অর্জনের কথা তুলে ধরে বলেন, এক বছর সফলতার সঙ্গে পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এজন্য কৃতজ্ঞ। এ সময়ে সমুদ্রসীমার রায়ে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে। মন্দা মোকাবেলা করে অর্থনৈতিক গতি ঠিক রাখতে পেরেছে বিশ্বের এমন ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২। মুদ্রাস্ফীতি ১২-১৩ থেকে নামিয়ে ৬ দশমিক ১-এ নিয়ে এসেছি। দ্রব্যমূল্য ক্রয়মতার মধ্যে রাখতে পেরেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছি।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ, মহিলা লীগের সভানেত্রী আশরাফুন্নেছা মোশাররফ, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউছার, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার প্রমুখ।
