loওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী: উন্নয়নশীল দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী তিন জনের মধ্যে একজন নারীর বিয়ে হয়। আর ১৫ বছরের কম বয়সী নারী শিশুদের বিয়ের হার সেখানে ১০ শতাংশ। সংস্থার প্রোগ্রাম অর্গানাইজার আবু বাক্কার সিদ্দিক শিশু অধিকার সংগঠন ওই শিশু কনেদের দৃষ্টির অলক্ষে থাকা নারী শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বিস্মৃত বলে অভিহিত করেছেন। ওই সংগঠন আরো জানান, বিবাহিত শিশুরা সাধারণত পিছিয়ে পড়ে। এদের নানা ধরনের সহিংসতা, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং অকালে বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সহযোগিতায় স্থানীয় স্ব-উন্নয়ন সংস্থার বাস্তবায়নে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ প্রকল্পের এ বছরের এক জরিপে জানা যায়। উপজেলার পাকুড়িয়ায় ১৫৩ জন, বাজুবাঘায় ৮৮ জন, বাউশায় ১৬০ জন ও আড়ানীতে ৮৯ জন নারী অল্প বয়সে বিয়ে, যৌতুক, পরকিয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।স্থানীয় স্ব-উন্নয়ন সংস্থার তথ্যমতে জানা যায়, ১৫ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায় নারীদের। বর্তমানে বাল্য বিয়ে যে হারে বাড়ছে তাতে ২০২০ সাল নাগাদ ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় দুই শতাধিক নারী শিশু স্বামীর ঘরে যাবে। বর্তমানে এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা গিয়ে দাড়াবে দ্বিগুন। আর এ অবস্থাকে নারী শিশুদের উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেঞ্চরা। তবে এবছরে স্থানীয় স্ব-উন্নয়নের কমিউনিটি সদস্যরা ১৮টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক নারী শিশু দিবসকে সামনে রেখে জাতিসংঘ, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের বড় একটি সতর্কবার্তা হিসেবে সামনে চলে এসেছে। নিঃসন্দেহে এ সমস্যার ব্যাপ্তির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন বিশেঞ্চরা। এটা এমন এক বয়সে বিয়ে যখন একটা নারী জানেই না বিয়ের অর্থ কি। এভাবে নারী শিশুদের শৈশব ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে। তারা শাররীরিক ও মানষিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই মা হচ্ছে। আর আমরা দেখছি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের দারিদ্র। এই মুহূর্তে এক শ্রেণির দুষ্টচক্রকে প্রতিহত করতে হবে। সংস্থার হিসেবে হরিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, বাল্য বিয়ের কারণে নারী নির্যাতনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিসত্তর এনজিওর পাশাপাশি সরকারীভাবে কার্যক্রম ও গতিশীল এবং সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে এর প্রতিকার গ্রহণ না করলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এছাড়া শারীরিক, মানষিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বাল্য বিয়ের কারণে নারীরা। বেশিরভাগ অভিযোগই যৌতুকের কারণে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও রঙ কালো বলেও নারীকে নির্যাতিত হতে হচ্ছে পাষণ্ড স্বামীর ঘরে। উপজেলা পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ প্রকল্পের কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, উপজেলায় চারটি ইউনিয়নে ভিজিলেন্স টিম গঠন করে ওয়ার্ড পর্যায়ে ৫২টি উপ-কমিটির মাধ্যমে বাল্য বিয়ে, পারিবারিক নারী নির্যাতন রোধে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি নির্যাতিত নারীদের আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র হালদার জানান, এলাকায় বাল্য বিয়ের খবর পেলে সাথে সাথে পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
