আব্দুল হামিদ, বটিয়াঘাটা (খুলনা) : এক কালের প্রমত্ত পশুর নদ এখন শুধুই কালের স্বাক্ষী। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে সে তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় তার বুকে গড়ে উঠেছে আবাস স্থল। মানুষ তৈরী করেছে ঘর বাড়ী । হাজার হাজার একর জমিতে উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। জেগে উঠা জমির দখল নিয়ে মাঝে মধ্যে চলছে তিন থানার মানুষের মাঝে রক্তয়ী সংঘর্ষ। পশুরের অস্তিত্ব বিলীন হবার সাথে সাথে বহু হাট-বাজার হারিয়েছে প্রাণ চাঞ্চল্যতা। বঙ্গপসাগর থেকে উঠে আসা পশুর রামপাল, বটিয়াঘাটা ও ফকিরহাট থানার সীমানা ছুয়ে শাখা প্রশাখা বিস্তারের মাধ্যমে গোটা উপকূল অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে। ফসল উৎপাদন, নৌপথে যাতায়াত সহ বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ স্থাপনে পশুরের ভুমিকা ছিল ব্যপক। ধিরে ধিরে পশুর একদিন তার প্রাণ হারিয়ে ফেলায় জেগে ওঠে হাজার হাজার একর খাস জমি। আর প্রভাবশালী মানুষেরা দখল করে নিয়েছে সেই খাস জমি। পশুর থেকে জন্ম নেয়া নালুয়া, খড়িয়া, বলা সহ বহু শাখা প্রশাখা সম্পূর্ণ বিলিন হয়ে গেছে। মানুষ তার চিহ্ন পর্যন্ত মুছে দিয়েছে। বর্যায় দুরন্ত পশুরের বুক চিরে মাঝি মাল্লারা পাল তুলে বেয়ে যেত রং-বেরংয়ের নৌকা। জেলেরা এ নদ থেকেই তুলতো ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। নালুয়ার বাঁকে, সুভদিয়ার বাঁকে, বলার বাঁকে জেলেদের চলত মাছ ধরার উৎসব। বয়ে যাওয়া পশুর আর তার শাখা প্রশাখায় খেয়া মাঝি দু’পারের মানুষের মাঝে সংযোগ স্থাপন করে রাখত। পশুর আর নালুয়ার বুকে তৈরী ব্রিজ আজ আর কোন কাজে লাগেনা। খেয়ার মাঝিরা তাদের পূর্ব পুরুষের পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। ভান্ডারকোট, হালিয়া, নোয়ালতলা সহ বিভিন্ন গ্রামের জেলে পরিবার আজ তাদের পেশা হারিয়ে অনেকেই অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছে। পশুর আর তার শাখা প্রশাখা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে অনেক সময় ফসল হানি ঘটে থাকে। এখন এলাকার মানুষের দাবী ফসল উৎপাদন করার জন্য পশুর সহ অন্যান্য নদ-নদী গুলো খনন করা হোক।
