ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী : রাজশাহীর মহানগরীকে দূষণ করছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও কিনিক-প্যাথলজির চিকিৎসা বর্জ্য। এসব বর্জ্য নষ্ট কিংবা শোধনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তা সরাসরি ফেলা হচ্ছে ভাগাড়ে। এতে মহানগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে পাশাপাশি পরিবেশ হচ্ছে দূষিত।

রাজশাহী সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীতে বর্তমানে অনুমোদিত কিনিক আছে ৪৫টি ও প্যাথলজি আছে ৪১টি। নয় উপজেলায় দেওয়া হয়েছে ২১টি কিনিক ও ১৯টি প্যাথলজির অনুমোদন। হাসপাতাল-কিনিক ও প্যাথলজির নিবন্ধন বা অনুমোদন পেতে হলে তাদের পরিবেশ ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়াও অনেক কিনিক ও প্যাথলজি গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে।
পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের মতে, একেকটি কিনিক একেকটি ইটভাটার মতোই পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠান। বিধি অনুযায়ী এসকল প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা না থাকলে এবং এ বিষয়ে মামলা হলে তাদের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে এই বিধান সীমাবদ্ধ আছে শুধুমাত্র আইনের বইতে। এখন পর্যন্ত রাজশাহীর পরিবেশ দূষণকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তার কোনো প্রয়োগ করেনি পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থা।

এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ ধরনের বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ভয়ানক হচ্ছে সংক্রামক বর্জ্য। এগুলো হচ্ছে রক্ত, পূজ, দেহরস দ্বারা সংক্রমিত গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, স্পঞ্জ, সোয়াব, মব, প্লাস্টার, ক্যাথিটার, ড্রেনেজ টিউব, রক্ত সঞ্চালনের ব্যাগ/টিউব, রক্ত দ্বারা সংক্রমিত স্যালাইন সেট, জমাট বাঁধা রক্ত বা দেহরস, ডাইরিয়া রোগীর সংক্রমিত কাপড়চোপড় এবং সংক্রমিত সিরিঞ্জ।
একই ধরনের ভয়াবহ এনাটমিক্যাল বর্জ্য, যেমন-মানব দেহের কেটে ফেলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, টিস্যু টিউমার, গর্ভফুল বা গর্ভ সংক্রান্ত বর্জ্য। তেজস্ক্রিয় বজ্রের মধ্যে রয়েছে রেডি একটিভ আইসোটোপ, তেজস্ক্রিয় বস্তু দ্বারা সংক্রমিত সব বর্জ্য, অব্যবহিত এক্সরে মেশিনের হেড ইত্যাদি।
এসব বর্জ্য নিয়ম অনুযায়ী বিশেষভাবে সংরণ করে ইনসাইনেরেটরে বিনষ্ট ও শোধন করতে হবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। বর্জ্য বিনষ্ট ও শোধন ব্যবস্থা না থাকায় রাজশাহীতে বেসরকারি কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তবুও চলছে শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল-কিনিক-প্যাথলজি।
অপরদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্জ্য বিনষ্ট ও শোধন করার জন্য ইনসাইনেরেটর (চিকিৎসা বর্জ্য বিনষ্ট করার চুলি) থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে তা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এখন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সব চিকিৎসা বর্জ্যই সিটি করপোরেশনের ভাগাড়ে নিয়ে ফেলা হচ্ছে।
দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য বহনকারী ভ্যানগাড়ি বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজি থেকে বর্জ্য নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পাশের এক জায়গায় জড়ো করছে। একই জায়গায় রামেক হাসপাতালের বর্জ্যও এনে ফেলা হচ্ছে। এরপর এখান থেকে সব বর্জ্য সিটি করপোরেশনের ট্রাকে তুলে মহানগরীর উত্তর পাশে সিটি করপোরেশনের ভাগাড়ে নিয়ে ফেলা হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, তাদের ইনসাইনেরেটরটি দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে পড়েছিল। সেটি রণাবেণ এবং মেরামতের দায়িত্ব রাজশাহী সিটি করপোরেশনের। সেটি মেরামতের জন্য সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পর মেরামতের কাজ শুরু করেছে। ইনসাইনেরেটরটির মেরামত কাজ শেষ হলে সেখানে পুরোদমে সব চিকিৎসা বর্জ্য বিনষ্ট করা সম্ভব হবে জানান হাসপাতালে পরিচালক।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলীর বলেন, রামেক হাসপাতালের ইনসাইনেরেটরটি মেরামত করা হচ্ছে। কাজ শেষ পর্যায়ে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে মেরামত কাজ পুরোপুরি শেষ হবে এবং ইনসাইনেরেটরটি ব্যবহার করা যাবে। তখন এ সমস্যা কেটে যাবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা থাকলেই কেবল বেসরকারি হাসপাতাল-কিনিক-প্যাথলজি ছাড়পত্র পাবে। পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকলে আইন অনুযায়ী বেসরকারি কিনিক, হাসপাতাল বা প্যাথলজির অনুমোদন পাওয়ার কথা না।
