ads

রবিবার , ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ | ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসী ও বীরত্বের নায়ক কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল গফুরের ভাগ্যে মিলবে কি রাষ্ট্রীয় খেতাব?

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
ডিসেম্বর ২১, ২০১৪ ১:৫৭ অপরাহ্ণ

Sherpur Pic-2 (Muktijuddha Abdul Gofur)স্টাফ রিপোর্টার : মহান মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতা ও বীরত্বের কারণে রাষ্ট্রীয় খেতাব বা পদক দ্বারা সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীত করা হলেও সেই প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শেরপুর অঞ্চলের কোম্পানী কমান্ডার ও গফুর বাহিনী প্রধান আব্দুল গফুর (৬৯)। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পরও অসামান্য বীরত্ব প্রদর্শনকারী ওই যোদ্ধার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ অনেকেই। তবে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ নন যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর। তার মতে, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশটা স্বাধীন করতে পেরেছি এটাই জীবনের বড় পাওয়া’।

Shamol Bangla Ads

অসম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী উত্তরবন্দ গ্রামের উমির উদ্দিনের ছেলে। দুই সন্তানের জনক এ বীর যোদ্ধা স্ত্রীকে সাথে নিয়ে এখন বসবাস করছেন নিজগ্রামের বাড়ীতেই। বিয়ে দিয়েছেন ছেলে-মেয়েকে উভয়কেই। শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে এখন আর বাইরে খুব একটা বেরোননা। নিজ বসতবাড়ীতে যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণা করে তিনি জানান, ১৯৭১ সনের মে মাসে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তিনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডালুতে আশ্রয় নেন এবং মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখান। পরে তুরা জেলার রংরাম অঞ্চলে হাবিলদার মেজর রনজিৎ সিং এবং হাবিলদার প্রতাপ সিং এর তত্ত্বাবধানে কঠোর ট্রেনিং নেন। ট্রেনিং শেষে তার নেতৃত্বে ১শ ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তার নামে ‘গফুর বাহিনী’ গঠন করা হয়। জুলাই মাসে তার বাহিনী শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া এলাকায় প্রথম হামলা চালিয়ে সেখানে পাহারারত রাজাকার বাহিনীকে হটিয়ে দেয়। আগস্ট মাসে দূর্ধর্ষ গফুর বাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীর ৩টি শক্ত ঘাঁটিতে সফল অপারেশন চালায়। এগুলো হচ্ছে তেলিখালি অপারেশন, বান্দরকাঁটা ও কাশীগঞ্জ অপারেশন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সম্মুখযুদ্ধের অন্যতম হচ্ছে তেলিখালি যুদ্ধ। সেই তেলিখালিতে পাকিস্তানী বাহিনীর শক্ত ঘাঁটিতে আব্দুল গফুরের নেতৃত্বে সফল অপারেশন চালিয়ে পাকিস্তানী সেনা সহ ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়। এর পরপরই বান্দরকাঁটা ঘাঁটিতে তাদের হাতে ২০/২৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। তবে ফুলপুরের কাশীগঞ্জে অপারেশন চালাতে গিয়ে এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। তিনি বাম হাতের কনুইয়ের নীচে গুলি ও স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হওয়ার ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে বলেন, ‘সেদিন ছিল আগস্টের ২৮ তারিখ। পাকিস্তানী সেনা ও তাদের দোসরদের উপর হামলা চালানোর জন্য কাশীগঞ্জে আমার বাহিনী নিয়ে অবস্থান নেই। কিন্তু গোপনসূত্রে সংবাদ পেয়ে পাকিস্তানী বাহিনী তাদের দোসরদের নিয়ে নৌকাযোগে এসে তিনদিক থেকে আমাদের উপর হামলা চালায়। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে গুলির লড়াই। এসময় আমার কোম্পানির ৭ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকিস্তানী বাহিনীর বিপুল ক্ষতি হয়। আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত পাকিস্তানী বাহিনীর মোকাবিলায় আমরা কৌশল হিসেবে পশ্চাদপসারন করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করি। গোলাগুলি চলাকালে আমি স্পিøন্টার ও বুলেটে আহত হই।’ তিনি আরও বলেন, ‘নভেম্বর মাসে তার বাহিনী নন্নী এলাকার সড়কে মাইন পুঁতে রেখে পাকিস্তানী বাহিনীর ক্যাপ্টেন জাবেদ ও অন্য সেনা সহ তাদের বহনকারী জীপটি ধংস করে। এ ঘটনার পর তারা নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়নে রেকি করে নিশ্চিত হন যে, নন্নী-তাজুয়াবাদ সড়কে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে পাকিস্তানী বাহিনীর মেজর ইয়ানুছ যাতায়াত করেন। এরই প্রেক্ষিতে তাজুয়াবাদ গ্রামের আব্দুল আলীর বাড়িতে তিনি তার দলের চৌকস ৬০জন সদস্যকে নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এর আগেই গৃহস্বামী আব্দুল আলীকে তারা সপরিবারে ভারত ভূখন্ডে পাঠিয়ে দেন। কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল গফুর বলেন, নভেম্বর মাসের সঠিক তারিখটা এখন আর মনে নেই। তবে ঘটনার দিন খুব ভোরে আমরা ৩টি এলএমজি, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চাইনিজ রাইফেল ও গুলি নিয়ে এমবুশ করি। মেজর ইয়ানুছ নিত্যদিনের মত জীপ নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা অতর্কিতে তার ওপর হামলা চালাই। এর ফলে পাক মেজর ৫জন সেনা সহ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। জীপটিও বিধ্বস্ত হয়। ’
‘এটাই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অপারেশন’ বলে মনে করেন জীবন বাজী রাখা এ যোদ্ধা। আর তার ওই সাহসিকতার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার স্যাম সিং তাকে ব্যক্তিগতভাবে ১টি উন্নতমানের কম্বল ও ১টি রোমার ঘড়ি উপহার দেন। ওই সময় শেরপুরের তদানীন্তন এমএনএ ও আওয়ামীলীগ প্রধান অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তার ওই সাহসিকতার জন্য বিদেশী বন্ধুরা তাকে সেদিন সম্মানিত করলেও স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও অকুতোভয় এ মুক্তিযোদ্ধার ভাগ্যে জুটেনি রাষ্ট্রীয় কোন পদক বা খেতাব। এক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক হীনমন্যতাই দায়ী বলে মন্তব্য ওয়াকিবহাল মহলের।
এ ব্যাপারে কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল গফুরের সহযোদ্ধা কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক বলেন, গফুর ভাই একজন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ছিলেন। তিনি আধুনিক রণকৌশলে প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের ৫টি ঘাঁটিতে সফল আক্রমন চালিয়ে বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন। একাত্তরে তার অসম সাহস আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। এটা ঠিক, তিনি যেভাবে সব সফল অপারেশন পরিচালনা করেছেন, যুদ্ধ করেছেন, তার মতো বীরের আরও সম্মানীত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিবিদদের হীনমন্যতার কারণে তিনি প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে মনে ক্ষোভ থাকলেও তিনি গর্বিত দেশ মাতৃকাকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন। কতো মানুষ কতোভাবে সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু গফুর ভাই ছিলেন সবসময় ব্যতিক্রম। তার যুদ্ধকালীন সাহসিকতার কথা স্মরণ হলে মনে মনে এখনও আমি তাকে স্যালুট জানাই। একই মত পোষণ করে মুক্তিযোদ্ধা নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াদুদ অদু বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেককেই খেতাব দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাদের মত কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল গফুর ও কোম্পানী কমান্ডার গিয়াস উদ্দিনসহ আরও যারা রয়েছেন যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে তাদেরকেও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। এজন্য তিনি সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি দাবি জানান।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!