রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাও) প্রতিনিধি : ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল দোশিয়া রাজবাড়ি গ্রামে একই পরিবারে ৪ বীরাঙ্গনার পরিচয় মিলেছে। অসহায় বীরাঙ্গনাদের দেখার কেউ নেই।

দোশিয়া গ্রামের মৃত জসরত আলীর মেয়ে আমিনা (৬৫), মালেকা (৬৩), মকলেসা(৬০) ও বুদি চার মেয়েকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাসের পর মাস আটকে রেখে দালালদের সহযোগিতায় সম্ভ্রমহানি চালাতো পাকিস্থানী বাহিনী।
উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কুলিক নদীর পার্শে দাড়িয়ে থাকা রাজ স্বাক্ষী রাজবাড়ির পার্শে কোন রকম মাথা গোজার মত একটি ছোট ঘরে বাস করে আমিনা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্থানী শোষক বাহিনীর কুনজরে পড়ে আমিনাসহ ৪ বোন। তাদের সহযোগিতা করে স্থাণীয় দালাল চক্র। আমেনা আমাদের প্রতিনিধিকে জানায়, তার ৬ বছরের একটি মেয়ে ছিল। পাকিস্থানী বাহিনী তাকে মাসের পর মাস আটকে রেখে অমানবিক সম্ভ্রমহানি চালায়। কোন রকম যতœ নিতে না পারায় যতেœর অভাবে আমার মেয়েটি মারা যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে মারা যায় বিরঙ্গনা বুদি। বেঁচে আছে ৩ বোন। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে ঘরের জিনিসপত্র ভিজে যায়। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে তার। এমনি ভাবে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে মালেকা, মকলেসা। বিরঙ্গনা হওয়ায় ধিক্কারে লজ্জিত হতে হয় তাদের। বিরঙ্গনা হওয়ায় মানুষের বাড়িতে কাজ পাওয়া যায়না। অসহায় দুস্থ পরিবারের সসদস্য হওয়ায় দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। সরকারি অনুদান ছাড়া অভাব অনটনের কষ্ট দুর করা সম্ভব হচ্ছেনা। বাঙ্গালী ইতিহাসে একই পরিবারে আপন ৪ বোন বিরঙ্গনা হওয়ার মতো এমন বিরল ঘটনা চোখে পড়ে বলে মনে হয়না।
বিভিন্ন এনজিও এবং দাতা সংস্থাগুলো বিরঙ্গনাদের পাশে এসে দাঁড়ালেও এই পরিবারের বিরঙ্গনা ৪ বোনের ভাগ্যে তেমন কিছু জোটেনি। চেয়ে আছে তৃষ্ণার্ত কাকের মতো সাহায্য সহযোগিতার আশায়।
এছাড়াও উপজেলার ভান্ডারা গ্রামের গদই চকিদারের স্ত্রী চানমনি ও তার মেয়ে সরেফা ওরফে বাতাসি বিরঙ্গনা। তাছাড়া বলিদ্বারার টেপরি বালা, মালেকা, হাসিনা, আনেসা, আসিনা, রওশন আরা, নিহা রানি দাস, ঝর্না রানি মন্ডল, কেউটানের তীর্থ বালা, রাউৎনগর গ্রামের শিতা হেমরন, মনি কিসকু, সুমি বাসুনি, হনুফা, জবেদা, হাফেজা নামক বিরঙ্গনাদের নাম পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
উপজেলার বিরঙ্গনাদের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে নজর দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। বিরঙ্গণাদের আকুতি সরকার মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও আমাদের প্রতি তেমন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা। আমাদের দেখা হোক, আমরাও বাঁচতে চায় সুস্ত স্বাভাবিক জীবন নিয়ে।
