শ্যামলবাংলা ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ৪৩তম বার্ষিকীতে সেই বীর সন্তানদের স্মরণ করছে জাতি, যাদের রক্তের বিনিময়ে দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটেছিল,বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশ নামের নতুন এক রাষ্ট্রের। ১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শেরে বাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে (পুরনো বিমানবন্দর) ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয়ের এই দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।

সকাল সাড়ে ৬টার পর প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সেই মুক্তিসেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় সালাম জানায়। শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবারো স্মৃতিসৌধে ফুল দেন শেখ হাসিনা। এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পরে স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পতাকা আর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে সৌধ প্রাঙ্গণে। মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদি। এদিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেখানে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা ।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়া স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি যান জাতীয় সংসদ সংলগ্ন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বিজয় দিবস উদযাপনে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সশস্ত্রবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদকে সশস্ত্র সালাম ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ শুরু হয়।
সকাল ১০টা ৫ মিনিটে কুচকাওয়াজের উপ-অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেনের নেতৃত্বে সকল বাহিনীর সদস্যরা কুচকাওয়াজের জন্য প্রস্তুত হন। কুচকাওয়াজে অংশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), বিজিবি, পুলিশ বাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, মহিলা পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরা। প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ ও সশস্ত্রবাহিনীর মহড়া উপভোগ করেছেন প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধানসহ, দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক প্রমুখ। এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কুচকাওয়াজ ও মহড়া দেখতে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সমবেত হন।
বিজয় দিবসে সাধারণ ছুটির দিনে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উড়ছে। প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো সাজানো হয়েছে জাতীয় পতাকা ও রং-বেরংয়ের পতাকায়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় রাতে আলোকসজ্জাও হবে।
এ দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বেতার ও টেলিভিশনেও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে।
