রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলর আমন ও সব্জি চাষীরা বিপাকে পড়েছে। অধিক লাভের আশায় ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে তারা। গুনতে হচ্ছে লোকসানের হিসাব। উপর্যুপরি লোকসান গুনতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা। অনেকে এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছে যারা ফসল বিক্রী করে লোকসানে পড়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে বাড়ির গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি বিক্রী করে সর্বস্ব হচ্ছে।
সমাজের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে অনেকে এনজিও, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সব্জি আবাদ করেছে স্বর্নালী সূর্যের মুখ দেখার জন্য, তা কিন্তু আর হলোনা। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করে নিরাশ হওয়া ছাড়া ভাঙ্গে আর কিছু জোটেনি তাদের। এনজিও কর্মীরা বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে ঋণ আদায়ের জন্য। অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ঋণ গ্রহিতা কৃষকরা গা দেয়ার চেষ্টা করছে। তাতে নিস্তার নেই, ঋণের টাকা না পেয়ে চাকুরী বাঁচাতে গিয়ে রাতের বেলাও হানা দিচ্ছে ওই সব কৃষকের বাড়িতে এনজিও কর্মীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এক বস্তা ধানের উৎপাদন খরচ ১৪’শ টাকার অধিক হলেও তা বিক্রী হচ্ছে মাত্র সাড়ে ১২ থেকে ১৩’শ টাকায়। এদিকে আলূ, কপি, মুলাসহ নানা জাতের সব্জির দাম দিন দিন নিম্ন মূখী হওয়ায় বাধ মানছে না কৃষকের চোখের পানি। হাওমাও কান্না যেন এখন কৃষের একমাত্র সম্বল হয়ে পড়েছে।
উপজেলার বীরগড় গ্রামের শামসুল হুদা, হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ, চৌরঙ্গীর মোঃ হানিফ, কাঁঠালডাঙ্গীর আঃ রাজ্জাকসহ অনেকে জানান, এবার ধানের পাশাপাশি আলু, মুলা, কপি, শাকসব্জির চাষ করে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য অনেক কম এতে গুনতে হচ্ছে লোকসানের হিসাব।
টেংরিয়া গ্রামের মোঃ হানিফ জানালেন, গত মৌসুমে আলু চাষ করে বড় ধরনের ঋণগ্রস্থ হয়েছিলাম। ভুট্টা চাষ করে লোকসানের টাকা পরিশোধ করার স্বপ্ন দেখে সেখানেও আরো লোকসানের মুখে পড়ি। এসময় তার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিলো অনবরত। বড় কষ্টে আছি লোকসানে পড়ায় কোন দোকানদার আমাকে সদাই বাকি দিতে ভয় পায়। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দিন দিন ব্যাংক ঋণ খেলাপির দায়ে চক্র বৃদ্ধি হারে সুদের বোঝা বেড়েই চলেছে।
হরিপুরের মুনিরুজ্জামান জানান, বাড়িতে অসুস্থ রোগীর ঔষধ কিনতে পারছিনা। সব ধান বিক্রী করে যা পেয়েছি তাতে দেনা পরিশোধ করেও ঘাটতি থেকে যায়। এভাবে আমার মতো অনেকে বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়ায় তাদের ও এমন বিপদমুখী সময় পার করতে হচ্ছে।
ফসল উঠার সাথে সাথে স্থাণীয় হাট বাজারের দোকানদাররা হাল খাতার মহরত শুরু করেছে বকেয়া টাকা পাওয়ার আশায়। ফসল উৎপাদন করে ভাল ফলন হলেও দাম বিপর্যয়ের কারনে অনেক কৃষক দেওলিয়া হয়ে পড়েছে।
চাল কল মিল ব্যবসায়ী মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার ভারত থেকে চাল আমদানি করায় আমরা চালের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বেশী দামে চাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকার চাল কল মিল মালিকদের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ অভিযান আরম্ভ করেছে। চাল সংগ্রহের পরিমান আরো বৃদ্ধি করে সাধারন কৃষককে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে ভারত থেকে চাল আমদানী বন্ধ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
হরিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম বলেন, সরকার হরিপুর উপজেলা খাদ্য গুদামে যৎসামান্য চাল সংগ্রহ করছে। চাল সংগ্রহের পরিমান বাড়ালে এলাকার তৃণমুল পর্যায়ের কৃষকগণ উপকৃত হয়ে সমস্যার সমাধান হতে পারতো।
