দেলোয়ার হোসেন, জামালপুর : আজ ১০ ডিসেম্বর; জামালপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন ১১ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাস্ত করে জামালপুরকে হানাদার মুক্ত করে। উড়ানো হয় স্বাধীনতার পতাকা।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ জামালপুরে মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় এক মাস পর ২২ এপ্রিল পাকিস্তানী সশস্ত্র হানাদার বাহিনী তৎকালীন জামালপুর মহকুমা শহর দখল করে। শহরের পিটিআই ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন ভবন ছিল পাকিস্তানী ৩১ বালুচ রেজিম্যান্টের ঘাটি। পাক হানাদার বাহিনীর সহায়তায় তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা কামারুজ্জামান এবং আশরাফ হোসাইনের নেতৃত্বে গঠিত হয় আল বদর বাহিনী। সরকারী আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রী হোস্টেল ছিল আল বদর ক্যাম্প ও টর্চার সেল। সেখানে নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে মধ্যযুগীয় বর্বোরচিত কায়দায় নির্বিচারে হত্যা করা হত এবং ডিগ্রী হোস্টেলের পশ্চিমে পৌর গোরস্তানসংলগ্ন রেল লাইনের পাশে ফৌতি গোরস্থানে লাশ ফেলা দেওয়া হত। এ ছাড়াও সাধারণ মানুষকে ধরে এনে ছনকান্দায় শ্মশান ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা লাশ নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো।
৯ মাস যুদ্ধচালাকালীনসময়ে ১১ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জামালপুরকে হানাদার মুক্ত করতে একাধিকবার আক্রমণ চালায়। ৪ ডিসেম্বর ধানুয়া কামালপুর ঘাটির পতনের পর ৯৫ মাউন্টেড ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার হরদেব সিং ক্লের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ৮ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে জামালপুর ঘাটিকে অবরোধ করা হয়। ৯ ডিসেম্বর ১১ নম্বর সেক্টরের অকুতভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী বীর প্রতীক বার সারেন্ডারপত্র নিয়ে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে গেলে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে মিত্রবাহিনী বিমান হামলা চালায় এবং ভোর সাড়ে ৪টায় পাকিস্তানী বাহিনী নিস্তব্ধ হয়ে যায়। পাকিস্তানী ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সুলতান মাহমুদ ২০০ সৈন্য নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
সকালের সূর্য কুয়াশা সরে যাওয়ার পর দেখা গেলো, সর্বত্র মৃতদেহ ছড়িয়ে আছে আর আহদের শুরু হয়েছে ক্রন্দন। পাকিস্তানীদের ২৩৫ জন নিহত, ২৩ জন আহত আর ৬১ জনকে বন্দী করা হয়। জামালপুরের মূল ঘাটিতে অবস্থানকারী ৩১ বালুচের সেকেন্ড ইন কমান্ড ৩৭৬ জন সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র অস্ত্রপাতি ছাড়াও তিনটি ১২০ মিলিমিটার কামানসহ বিপুল সংখ্যক গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। মিত্রপক্ষের ১ মারাঠা লাইট ইনফ্যানটির ১০ জন এবং ১৩ গার্ড রেজিমেন্টের একজন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়।
উল্লেখ্য যে, ১০ ডিসেম্বর জামালপুর ঘাটির পতনের পর পাকিস্তানী হানাদাররা একের পর এক পশ্চাদপসারণ হতে থাকে এবং ১৬ ডিসেম্বর গোটা দেশে বিজয়ের আনন্দ বয়ে যায়।
হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জামালপুর জেলা কমান্ড বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
