ads

মঙ্গলবার , ২ ডিসেম্বর ২০১৪ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কথা : কাশেম মোল্লার রেডিও ও বিবিসি বাজার

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
ডিসেম্বর ২, ২০১৪ ৫:৫৮ অপরাহ্ণ

Pabna Photo (1)ইমরোজ খোন্দকার বাপ্পি, পাবনা : বৃটিশ ব্রডকাষ্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) কে আমরা সকলে বিশ্বের অতি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম হিসেবে জানি। কিন্তু বিবিসি বাজার সেটা আবার কি? হ্যাঁ ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক গৌরবময় স্মৃতি ধারন করে গড়ে উঠা বাজার। যার নাম বিবিসি বাজার ।
১৯৭১ সাল। পাকিস্থানী সেনাবাহিনী ক্যাম্প বসিয়েছে পাবনার পাকশী পেপার মিল ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকাতে। পেপার মিল থেকে দক্ষিণ দিকে সামান্য পথ গেলেই গ্রামটি। গ্রামের বাসিন্দা কাশেম মোল্ল¬া। অভাবের কারণে ক্লাস সেভেনের বেশি পড়া হয়নি তার। ফলে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে পাকশী রেল বাজারে দেন একটি মুদি দোকান। ‘১৯৭১ এর ২৫শে মার্চের পরে পাকিস্থানী  আর্মি বাজার পুড়িয়ে দিলে, তিনি চলে যান নিজ গ্রাম পাকশীর রূপপুরে। নিজের হাতে লাগান একটি কড়ই গাছ। গাছের পাশেই দেন ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। মুক্তিযুদ্ধের সময় সবাই যখন উৎবেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দেশের খবর জানে না কেউ। যোদ্ধারা অধির আগ্রহে চেয়ে থাকত কখন কি নির্দেশনা প্রদান করা হয়- আর সেই খবর তারা কি ভাবে পেতে পারে। রেডিও পাকিস্থানেও নেই সঠিক কোন খবর। খবর শুধুই বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, কলকাতা বেতার আর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন কাশেম মোল্লা। হানাদার বাহিনীর পিস্তলের বাটের আঘাতে জখম হওয়া পা নিয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটা কাশেম মোল্লা  জানান, স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের ইচ্ছেই থ্রি ব্যান্ডের একটি রেডিও কেনা হয়েছিল। সে সময় পাঁচ গ্রামে খুঁজেও একটি রেডিও পাওয়া যেত না। আর সেই সময় থ্রি ব্যান্ড রেডিওর মালিক হওয়া ছিল রীতিমত গর্বের ব্যাপার। চায়ের দোকানে ক্রেতাদের ভীড় জমানোর জন্যেই দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে রেডিওটি দোকানে নিয়ে যেতাম। দেশে যুদ্ধ লাগার পর দেশের সামগ্রিক অবস্থান নিয়ে বিবিসি বাংলায় খবর প্রচারিত হত। মুক্তিযোদ্ধারা খবরা-খবর শোনার জন্য তার চায়ের দোকানে অবস্থান নিত। ধীরে ধীরে সকলের মাঝে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের খবর শুনে দেশাত্ববোধে জাগ্রত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ত। কাশেম মোল্লা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি রেডিওতে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর শোনাতেন। রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও কলকাতা বেতারের খবর শোনার জন্য আশপাশের মানুষ দু’বেলা নিয়মিত ভিড় জমাতো তার চায়ের দোকানে। চা খেতে আসা নানান লোকজনের নানা তথ্য থাকত কাশেম মোল্লার কাছে। গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশীয় দোসর, রাজাকার ও পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর সমন্ধে তথ্য দিতেন। ক্রমেই ভীড় বাড়তে থাকল তার দোকানে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গড়ে উঠল সম্পর্ক। অনেক সময় খবর পরিবেশন হয়ে যাওয়ার পর, যোদ্ধারা রণাঙ্গন থেকে ফিরে আসলে তিনি সেই তথ্য গুলো শুনে রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের শোনাতেন।
Pabna Photo (2)হঠাৎ একদিন দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েকদিন আগে রাজাকারদের খবরের ভিত্তিতে পাকিস্থানী সেনারা হানা দেয় কাশেম মোল্লার চায়ের দোকানে। কাশেম মোল্ল¬ার ভাষায়,“পাকিস্থানী সেনারা আমারে হুংকার দিয়া অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়া বলে, তোম এধার আও, তোমহারা দোকানমে রেডিও বাজতা হায়, শালে, তুমকো খতম কারদে গা, তুম রেডিও নিকালো।” সেনাদের কথায় আমার তো জানে পানি নাই। ভেবেছিলাম, মাইরে ফেলবি। আমি কলেম, ও চিজ হামারা নেহি হে, আদমি লোক খবর লেকে আতা হে, শুনলোকে লেকে চলে যাতা হে।”
কাশেমের কথায় তারা আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। হাতের রোলার আর রাইফেলের বাট দিয়ে তার পায়ে আঘাত করে। সেই থেকে আজও পর্যন্ত কাশেম মোল্লার সেই পা অকেজো হয়ে আছে।
সন্ধ্যে হলেই রূপপুর গ্রামে হাকডাক শুরু হতো। গ্রামের লোকেরা একে অন্যেকে বলত, চল ‘বিবিসি শুনতে যাই’। এভাবে কাশেম মোল্ল¬ার চায়ের দোকানে বিবিসি খবর শোনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে আরো কয়েকশত দোকান, বিস্তার লাভ করতে থাকে পরিধি। যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘বিবিসি শোনার বাজার’  এবং পরবর্তীতে বিবিসি বাজার নামে নাম করণ হয়।
পরবর্তীতে কিছু উৎসাহি লোক লন্ডনে চিঠি লিখে বিবিসি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়। একথা জেনে ১৯৯২ সালে বিবিসি’র পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাদের একটি টিম বাংলাদেশে এসে কাশেম মোল্ল¬ার সাথে স্বাক্ষাত করেন। উদেশ্য ছিল সরাসরি শ্রোতাদের সাথে আলাপ করা। পরিদর্শন করেন বিবিসি বাজারটি। এসেছিলেন বিবিসির ইস্টার্ন সার্ভিস সেকশন প্রধান ভ্যারী ল্যাংরীজ, বাংলা বিভাগের তৎকালীন উপ-প্রধান সিরাজুর রহমান, ভাষ্যকার দীপঙ্কর ঘোষ এবং বিবিসির সাবেক বাংলাদেশ সংবাদ দাতা আতাউস সামাদ।
সিরাজুর রহমান কাশেম মোল্ল¬ার চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। তিনি লন্ডন থেকে কাশেম মোল্লার উদেশ্যে বেশ কয়েক’টি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো বেশ কয়েক হাত ঘুরে কাশেম মোল্ল¬ার নিকট পৌঁছেনি। এখন কাশেম মোল্ল¬া বয়সের ভারে আর কোন কাজ করতে পারেনা, খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি গুলো মনে করে, আক্ষেপ করে বলে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হয়ে গেলেও এখন আমার আর কেউ খবর রাখে না। সেই বিবিসি বাজার এখন সরকারি করা হয়েছে, তবে কাশেম মোল্ল¬ার এখন আর সেই কদর নেই। তার নিজ হাতে লাগানো কড়ই গাছ বেশ মোটাতাজা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মাথা উঁচু করে আজও দাঁড়িয়ে আছে সেই গাছটি। হয়তো বা আরো বেশ কয়েক বছর থাকবে। কিস্তু কাশেম মোল্ল¬ার অবদান কি আমরা ভুলে যাব?
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হয়ে গেছে। বিবিসি বাজার অনেকে চিনলেও, জানে না এর গোড়ার কথা। জানে না বিবিসি বাজার গড়ে ওঠার পিছনে কাশেম মোল্ল¬ার অবদানের কথা। মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা। মুক্তিযুদ্ধের দিন গুলোতে যখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কিংবা বিবিসি’র অনুষ্ঠান শোনা ছিল ঝুকিপূর্ন। সেই সময় মহা উৎকন্ঠা, আশঙ্কার কথা জেনেও ভরা বাজারে বসে শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের শুনিয়েছেন। এটি কি সাহসিকতা নয়? এটা কি যুদ্ধ নয়?  এটি কি কম গৌরবের। দেশ প্রেমিক এই ব্যক্তিটি কি এতটুকু সহানুভূতি পেতে পারে না। দেশ প্রেমিক এই কাশেম মোল্ল¬ার জন্য রাষ্ট্র কি কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না?

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!