শ্যামলবাংলা ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। ১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ওই রায় ঘোষণা করে। বেঞ্চের বাকি ৪ সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
ওই মামলায় সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল ছিল। আদালত উভয়টির আংশিক মঞ্জুর করে। রায়ে ১০, ১৬, ১৯ নম্বর অভিযোগে জামায়াতের এই নায়েবে আমিরকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭ নম্বরের জন্য ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। ৮ নম্বর অভিযোগের অপর অংশসহ ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের রাজাকার সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল মৃত্যুদণ্ড। ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছিল তা বহাল থাকবে এটাই ছিল প্রত্যাশা। সেটা থাকেনি। আমার খুব খারাপ লাগছে। তবে আপিল বিভাগের রায়ের পর ‘ধর্মীয় নেতা’ হিসাবে সাঈদীর মুখোশ খুলে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একাত্তরে ভূমিকার কারণে দেইল্যা রাজাকার নামে খ্যাত এই জামায়াত নেতার সাজা কমানোর রায় আসায় তাৎক্ষণিকভাবে আদালতের বাইরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। শাহবাগে শ্লোগান ওঠে – ‘আঁতাতের এই রায় মানি না, প্রহসনের এই রায় মানি না’।
সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা এ রায়ের সঙ্গে একমত হতে পারিনি। খালাস আশা করেছিলাম। এই জামায়াত নেতার ছেলে মাসুদ সাঈদী রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ফাঁসি কমে আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে। তারপরও আমরা বলব যে ন্যায়বিচার পাইনি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল নির্দোষ প্রমাণ হয়ে বেকসুর খালাস পাব। আমরা পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর রিভিউ আবেদন করব।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের মধ্যে দ্বিতীয় আসামির মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো। এর আগে তার দলেরই নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তির পর গত বছরের ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।