ads

মঙ্গলবার , ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে বরিশালের পেয়ারা

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৪ ১০:৪৫ অপরাহ্ণ

কোল্ডস্টোরেজ ও জেলি কারখানা নির্মাণের দাবি বরিশালের উজিরপুর ও বানারীপাড়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের পেয়ারা চাষীদের

অপূর্ব লাল সরকার, উজিরপুর ও বানারীপাড়া (বরিশাল) থেকে ফিরে :
Barisal Guava Market at Boat= (2)বাংলার ‘আপেল’ নামে খ্যাত বরিশালের উজিরপুরের পেয়ারা। এ ফলটির আঞ্চলিক নাম ‘গইয়া বা গয়া’। পুষ্টিকর যত ফল বাজারে পাওয়া যায় তাতে ফরমালিন নেই এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যাবেনা। তবে বাজারে একমাত্র ফল পেয়ারায় ফরমালিন মেশানো হয়না, সেটা প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়। বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারা কম-বেশী সারাবছর দেশের বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যায়। জনপ্রিয় এ ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণেও অতুলনীয়। দেশের অন্য এলাকার উৎপাদিত পেয়ারার চেয়ে বরিশাল অঞ্চলে উৎপাদিত পেয়ারার চাহিদা দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশী।
বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে পেয়ারার ফলন হলেও উন্নত ও সুস্বাদু পেয়ারা বরিশাল জেলার উজিরপুর, বানারীপাড়া এবং পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলায় উৎপাদিত হয়। পেয়ারার মৌসুমের তিনমাস পাকা পেয়ারার মৌ মৌ গন্ধে এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ সুরভিত হয় ওঠে। উজিরপুর উপজেলার হারতা, পূর্ব হারতা, দক্ষিণ হারতা, নাথারকান্দি, দক্ষিণ হাবিবপুর, রাজাপুর এবং বানারীপাড়া উপজেলার গাভা, মাছরং, নরেরকাঠি, আলতা, জম্বুদ্বীপ, রায়েরহাট, সৈয়দকাঠি, তেতলা, ব্রাক্ষ্মণকাঠি, পূর্ব সৈয়দকাঠি, বিশারকান্দি, ইলুহার, মলুহারসহ ২০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা চাষ করা হয়।
ভাসমান হাটে পেয়ারা বিক্রি :
বর্ষামৌসুমে পেয়ারা বাগান সংলগ্ন নদী ও খালের মধ্যে বসে ভাসমান হাট। এ অঞ্চলের একটি বড় পেয়ারার হাট বসে দক্ষিণ নাথারকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ৩ খালের মোহনায়। হাটে বেচাকেনা শুরু হয় সকাল থেকেই। কিন্তু হাটটি জমে ওঠে দুপুর ১২টার পর থেকে। তখন পেয়ারা বোঝাই নৌকার সংখ্যা কয়েক শ’ ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া বানারীপাড়ার আটঘর কুড়িয়ানা, মাহ্মুদকাঠি, আলতা, সোহাগদল, রায়েরহাট, জম্বুদ্বীপ, পশ্চিম সৈয়দকাঠি, বিশারকান্দির বিভিন্ন খাল ও নদী মোহনায় নৌকায় করে পেয়ারার ভাসমান হাট বসে।
পেয়ারার মৌসুম:
Barisal Guava Market at Boat= (1)বাগানে বছরের ১২ মাস পেয়ারার ফলন হলেও মুলত: পেয়ারার মৌসুম বলতে বুঝায় আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র এই তিনমাস। নাথারকান্দি গ্রামের পেয়ারা চাষী বাসুদেব পান্ডে ও লিটন চন্দ জানান, বছরে ১২ মাসই কম বেশী গাছে পেয়ারা হয়। কিন্তু পেয়ারার মৌসুম হলো আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত। এই সময়ে গাছে ফলন বেশী হয়। দ্রুত পচনশীল ফল হওয়ায় প্রতিদিনই গাছ থেকে পেয়ারা তুলে বিক্রি করতে হয়। তাই রাত না পোহাতেই ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে চাষীরা ছোটেন নিজ নিজ বাগানে। পেয়ারা তোলা শেষে সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যেই তারা চলে যান নিকটবর্তী হাট বা ভাসমান হাটে।
বাগানেই নষ্ট হয়ে যায় অর্ধেক পেয়ারা:
পেয়ারা চাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিলন পাইক জানান, গুণগত মানের দিক থেকে আপেলের চেয়ে পেয়ারা স্বাদে ও পুষ্টিগুণে উৎকৃষ্ট। কিন্তু দ্রুত পচনশীলতার কারণে পেয়ারা চাষীরা পরেন বিপাকে। উজিরপুর, স্বরূপকাঠি ও বানারীপাড়ার সহ¯্রাধিক পেয়ারা চাষী ও পাইকার বাগানের ফলন নিয়ে থাকেন সর্বদাই আতঙ্কে। সংরক্ষণের অভাবে উৎপাদিত পেয়ারার প্রায় অর্ধেকটাই বাগানে পচে নষ্ট হয়ে যায়। তাই পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলের মধ্যবর্তী যেকোন স্থানে কোল্ডস্টোরেজ ও জেলি ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে পেয়ারা চাষীরা।
দেশ ছাড়িয়ে বরিশালের পেয়ারা বিদেশে:
দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বরিশালের পেয়ারা এখন পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশের মাটিতে। বর্তমানে ভারত, ব্রাজিল, পর্তুগীজ, কলম্বিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, মধ্যপ্রাচ্যের কাতার, বাহরাইন, দুবাই, ওমান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। পেয়ারা চাষী সৈয়দকাঠী ইউপি সদস্য ভুদেব মন্ডল এবং পূর্ব হারতার পেয়ারা চাষী কণিকা বিশ্বাস জানান, সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে পেয়ারা প্রসেসিং করে বিদেশে রফতানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। রায়েরহাট এলাকার পাইকার হারুন-অর-রশিদ জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কাঁচামাল রফতানীকারকরা বিভিন্ন হাটে এসে ভালো মনের পেয়ারা বাছাই করেন। পরবর্তীতে তা হাইজেনিক পদ্ধতিতে প্যাকেটজাত করে বিদেশে রফতানী করা হয়।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ:
একটি পেয়ারায় রয়েছে চারটি আপেলের সমান পুষ্টিগুণ। পেয়ারা এমন একটি ফল, যা সারাবছরই পাওয়া যায়। জনপ্রিয় এ ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণেও অতুলনীয়। পেয়ারায় আঁশ, পানি, কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি ও প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ময়েশ্চার ইত্যাদি উপাদান রয়েছে। পেয়ারা খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ইনফেকশনরোধী উপাদান থাকায় হজমক্রিয়া শক্তিশালী করে। হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য। ওজন কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করাসহ মুখের রুচি বাড়াতে পেয়ারার জুড়ি নেই। এছাড়া নিয়মিত পেয়ারা খেলে ত্বক, চুল ও চোখের পুষ্টি জোগায়। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে অন্তত: একটি করে হলেও পেয়ারা খাওয়া উচিৎ বলে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা মতামত দিয়েছেন।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুল হক মিয়া বলেন, দেশের উৎপাদিত পেয়ারার অর্ধেকের বেশী ফলন হয় বরিশাল অঞ্চলে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত পেয়ারা অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি অর্থকরী ফসল। কিন্তু পেয়ারা সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছরই চাষী ও বাগান মালিকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য শিল্প উদ্যোক্তারা কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ ও জেলি কারখানা স্থাপন করলে চাষী ও বাগান মালিকরা উপকৃত হবে। পাশাপাশি শিল্প উদ্যোক্তারাও লাভবান হবেন। তিনি আরো বলেন, গাছে ফুল আসা থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত বাগানে যাতে কোন রোগ বালাই না আসে সেজন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে পেয়ারা চাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। তারপরেও প্রতিবছরই ছিটারোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক পেয়ারা বাগানেই নষ্ট হয়ে যায়।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!