ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের রুহুলী দাখিল মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীসহ ১৩ জনকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবীতে ক্লাস বর্জন করে রোববার দুপুরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে রুহুলী দাখিল মাদ্রাসা রুহুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রী-ছাত্রী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, অভিভাবক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এতে বক্তব্য রাখেন রুহুলী দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি হাবিবুর রহমান রমজান, সুপার মো. রাজ মাহমুদসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। বক্তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবী জানান।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার ক্লাশ রুমে নবম শ্রেণীর দুই ছাত্র শুভ ও আকরাম মোবাইল চার্জ দিলে একই ক্লাশের ছাত্র আব্দুর রাজ্জাক তাতে বাধা দিলে উভয়ের মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আব্দুর রাজ্জাক ক্লাশ থেকে চলে যায়। পরে শিক্ষকরা ঘটনাটি নিস্পত্তির জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে অফিস কক্ষে বসলে আব্দুর রাজ্জাক বহিরাগতদের নিয়ে অফিস কক্ষে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এতে শিক্ষক সাগর মিঞা, ফরহাদ আলী, সানাউল এবং রনি আহম্মেদ, নাজমুল, জুলেখা, বিথী, সুমি, সজিব, রহিম, হোসেন আলী, ফাহাত বাদশাসহ ১০ ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়। এঘটনায় মঙ্গলবার রাতে সুপার মো. রাজ মাহমুদ বাদী হয়ে আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামী করে আতিকুর রহমান, আলতাফ হোসেন, সেলিম মিঞা, রিপন মিঞা, কামাল মিঞা, হাবিবুর রহমান, মাহফুজ মিঞার বিরুদ্ধে ভূঞাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এখনও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী নিয়োগে জটিলতা : ভূঞাপুরে টাঙ্গাইল-তারাকান্দী সড়ক অবরোধ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী-কাম প্রহরী নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার ৭ মাস অতিবাহিত হলেও ফলাফল ঘোষণা না করা ও বৈধ প্রার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পূর্ণ করার দাবীতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে দেড় ঘন্টা টাঙ্গাইল-তারাকান্দী সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এছাড়াও ওই এলাকার অর্জুনা মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়, অর্জুনা দাখিল মাদ্রাসা ও অর্জুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের থেকে বিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রমবন্ধ রাখা হয়।
সরজমিনে জানা যায়, উপজেলার অর্জুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি বিধি অনুযায়ী আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৩ বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিক দপ্তরী-কাম প্রহরী নিয়োগের জন্য গত ২রা জানুয়ারি একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে শাহিনুর খান, মমিনুল ইসলাম, মামুন খান ও টুটুল নামের চার ব্যক্তি আবেদন করেন। আবেদন অনুযায়ী ২৮শে জানুয়ারি প্রার্থীদের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার ৭ মাস অতিবাহিত হলেও ফলাফল ঘোষণা না করায় প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নিয়োগ নিয়ে দেখা দেয় নানা জটিলতা। বিদ্যালয়ের সভাপতি তুষার খান মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে টুটুলকে এবং এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের স্বার্থে দাতা সদস্য রমজান আলী খানের ছেলে শাহিনুর খানকে নিয়োগের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নিয়োগ না দেয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় অর্জুনা গ্রামবাসী রোববার সকাল থেকেই টাঙ্গাইল-তারাকান্দী সড়কের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। পরে তারা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁেধ সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-তারাকান্দী সড়ক অবরোধ করে রাখে। রাস্তার দু’পাশে আটকা পড়ে যানবাহন। এছাড়াও ওই এলাকার অর্জুনা মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়, অর্জুনা দাখিল মাদ্রাসা ও অর্জুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের থেকে বিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রমবন্ধ রাখা হয়।
খবর পেয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মো. হারেচ আলী মিঞা ও অর্জুনা ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ঘটনাস্থলে পৌছে এলাকাবাসীর দাবীর বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিবেচনার আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন।
এর আগে একই দাবীতে ৪ই সেপ্টেস্বর সকাল থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে তারা। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রম। ৭ ই সেপ্টেম্বর রোববার সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের সামনে বিক্ষোভ করে দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন ও সভাপতির পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট পেশ করেন। এসময় তারা এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেন। ১৩ই সেপ্টেম্বর আল্টিমেটামের সময় শেষ হয়।
অর্জুনা গ্রামের আব্দুস সাত্তার খান বলেন, কোমলমতি শিশুদের খেলাধুলার স্বার্থে বিদ্যালয়ের সামনের জমিটা দরকার। সে কারণে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য রমজান খানের ছেলে শাহিনুরকে গ্রামবাসী দপ্তরী পদে নিয়োগ দিতে চায়। কিন্তু স্কুলের সভাপতি তুষার খান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্বাক্ষরজ্ঞানহীন অন্য একটি ছেলেকে নিয়োগ দেয়ার পায়তারা করছেন। কিন্তু স্কুলের স্বার্থে কোন ভাবেই গ্রামবাসী তার এই অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে দিবেনা। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্বারক লিপি প্রদান করেছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা হরতাল অবোরোধের মতো আরো কর্মসূচী দেবো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খুরশিদা খানম বলেন, সামনের জমিটুকো বিদ্যালয়ের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। এই জমি টুকো হলে শিশুরা সুন্দরভাবে খেলাধুলা করতে পারবে। চলতি বছরের ২৮ শে জানুয়ারী মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন ফলাফল ঘোষণার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সভাপতি রেজাল্ডসিটে নম্বর না দিয়ে চলে গেলে ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি তুষার খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। স্কুলকে জমি দিলেই যে তাকে চাকরি দিবো এমন কথা আমি বলিনি। আমি অযোগ্য কোন প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়ে স্কুলের ক্ষতি হতে দিতে পারিনা। প্রধান শিক্ষিকা ও শিক্ষা অফিসার টাকার বিনিময়ে অযোগ্য লোককে নিয়োগ দিতে চান।
অবরোধের সত্যতা স্বীকার করে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মো. হারেচ আলী মিঞা বলেন, লোকজন রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
