নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট (রাজশাহী) : “বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুম কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে।” কবি রজনী কান্ত দাসের বিখ্যাত কবিতার নায়ক বাবুই পাখি আজ গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় গ্রাম বাংলার গাছে গাছে বিশেষ করে তাল, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, বোরই ও বাঁশ ঝাড়সহ বিভিন্ন গাছে বাবুই পাখির বাসা শোভা পেতো। একমাত্র বাবুই পাখি ছাড়া আর কারো পক্ষেই যেন সেই বাসা তৈরী করা অসম্ভব। পুরুষ বাবুই তো রীতিমতো আদর্শ প্রেমিক। কারণ তার সঙ্গীর মন জয় করতেই কঠোর পরিশ্রম করে মনের মাধুরী মিশিয়ে তিলে তিলে সে তৈরী করে এক একটি বাসা। এরা এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যায় পছন্দের সঙ্গী খুঁজতে।
দৃষ্টিনন্দন সেই বাসা বাতাসের দোলায় নাগর দোলার মত দোল খেতো। বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত। শক্ত বুননেরএ বাসাটি টেনে ছিড়া কঠিন। বাতাস কিংবা ঝড়ো হাওয়াতেও টিকে থাকতো সেই বাসা। সেই নিপুন বাস তৈরীর কারিগর বাবুই পাখি আজ বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে। রাজশাহীর চারঘাটসহ সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির সুনিপুন তৈরী বাসা চোখে পড়ে না। গ্রাম অঞ্চলে বাবুই পাখির আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন গাছ ক্রমাগত কেটে ফেলা, জমিতে কীটনাশক ব্যবহার এবং প্রকৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি অনেক শিকারী বাবুই পাখিদের বাসস্থল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় আগের মতো বাবইুয়ের বাসা দেখা যায় না।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্যে লালিত বাবুই পাখিদের টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের অভয়াশ্রম তৈরীসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
