এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : স্বামী ও সৎ ছেলে-মেয়েদের নির্যাতন সইতে না পেরে ঘর ছেড়ে জীবন বাঁচাতে গিয়েও শেষ রক্ষা হলোনা টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বিলচাপড়া গ্রামের গৃহবধু নাজমুন নাহার বেবীর। মনের ভিতর জমে থাকা দীর্ঘদিনের কষ্ট আর অপমানের জ্বালায় শনিবার ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে ঘর ছাড়ার একঘন্টা পর পার্শ্ববর্তী চর কয়ড়া গ্রামের রাস্তার পাশে জ্ঞান হারিয়ে নির্মম মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হয়েছে তাকে। বেবীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ স্বামী ও সৎ ছেলে- মেয়েদের নির্যাতন সইতে না পেরে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় সে। আর এ কারণেই অকালে জীবন দিতে হয়েছে তাকে।

এলাকাবাসী জানায়, ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বিলচাপড়া গ্রামের আব্দুল জলিল তালুকদারের ছেলে মুন্নাফ তালুকদারের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ১০ বছর আগে কালিহাতী উপজেলার শল্লা গ্রামের খন্দকার সাখাওয়াত হোসেনের মেয়ে নাজমুন নাহার বেবীকে বিয়ে করেন। মুন্নাফের প্রথম স্ত্রীর ঘরে রোজিনা, তানজিলা, তামান্না, ইকবাল ও ইমরান নামের ৫ সন্তান রয়েছে। পিতার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে না হলেও মন থেকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি সন্তানরা। বিয়ের পর থেকেই তারা সৎ মা বেবীর সাথে নানা ধরনের খারাপ আচরণ শুরু করে। নানা ধরনের কথা বলে উস্কে তুলে পিতা মুন্নাফের মন। সন্তানদের কান কথায় স্ত্রী বেবীর উপর শরীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু করে সে। এতে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বেবী। সন্তানরা ঠিকমত খাবার দিতোনা তাকে। এসব অন্যায় অত্যাচার সইতে না পেরে মাঝে মধ্যেই বাপের বাড়ি চলে যেত বেবী। স্বামী মুন্নাফ আবার বুঝিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসতো। এভাবে চলতে থাকে তার সংসার জীবন। সর্বশেষ ১১ দিন আগে সে বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে আসে। স্বামী সন্তান মিলে বেবীর উপর আবার শুরু করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এরই ধারাবাহিকতায় নির্যাতন সইতে না পেরে শনিবার ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে ৬ বছরের সন্তান মৌকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পাশ্ববর্তী চরকয়ড়া গ্রামের রাস্তার পাশে পড়ে যায় বেবী। এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। বেবীর মৃত্যুর সংবাদ শুনেও তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌছেনি শ্বশুর বাড়ির লোকজন। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ওইদিনই বেবীর লাশ ময়না তদন্ত শেষে বাপের বাড়ি শল্লা গ্রামে দাফন করা হয়।
নিহতের ভাই ফারুক হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার বোন বেীকে তার স্বামী ও সৎ ছেলে মেয়েরা নির্যাতন করে আসছিল। বোনের একমাত্র ৬ বছরের সন্তানের দিকে তাকিয়ে তা সহ্য করেছি। স্বামী আর সৎ ছেলে-মেয়েদের নির্যাতনের কারণেই অকালে আমার বোনকে প্রাণ দিতে হলো।
এব্যাপারে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ হারেচ আলী মিঞা বলেন, ‘লাশের ময়না তদন্ত করানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
