দেলোয়ার হোসেন, জামালপুর : একদিনের বাচ্চার দাম, খাদ্যসামগ্রী, ওষধপত্র, ভ্যাকসিন, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, ডিমের দাম হ্রাসসহ নানা প্রতিকুলতার মাঝেও জামালপুরে পোল্ট্রি শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। পোল্ট্রি মালিকরা এক ঝলক আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। পোল্টি শিল্প গড়ার মাধ্যমে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল ও বেকারত্ব মোচন ঘটানোর সম্ভব এমন স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে অনেকেই আজ নতুন করে এ শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।

গত এক যুগ আগেও গ্রামীণ জনপদে বেকার জীবনের গ¬ানি মোচনে জেলার আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছিল প্রায় ৮শ’ লেয়ার ও বয়লার পোল্ট্রি ফার্ম। কিন্তু বার্ড ফ্লু আতংক, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, এক দিনের বাচ্চার দাম বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের অভাব, দফায় দফায় ওষধের দাম বাড়ানোয় এ শিল্পে টিকে থাকা বেকারদের কঠিন হয়ে পড়েছিল। জেলায় একে একে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পোল্ট্রি ফার্ম। ফার্ম বন্ধে কর্মহীন হয়ে পড়েন জেলার হাজার হাজার বেকার যুবক। গত ২০১২ সনে জেলায় বার্ড ফ্লু আতংক দেখা দেয়। এই আতঙ্ক চারিদিকে ছড়ায়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আতঙ্কগ্রস্ত খামারিরা তড়িঘড়ি করে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। জেলার প্রাণী সম্পদ অফিস এ রোগটিকে রানী ক্ষেত বলে উলে¬¬খ করলেও একে একে বন্ধ হয়ে পড়ে প্রায় ৮০ ভাগ খামার। ২০১২ সনের পর নতুন উদ্যোমে আবার শুরু হয় এ শিল্প।
জেলা প্রাণী সম্পদক অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারা জেলায় প্রায় সাড়ে ১১শত লেয়ার ও বয়লার ফার্ম রয়েছে। কথা হয় জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের শেহড়াতলী গ্রামের পোল্টি ফার্ম মালিক জাহিদুল ইসলাম রুবেলের সাথে। তিনি জানান, আমি গত চার বছর আগে আমার বসতবাড়ী সংলগ্ন গড়ে তুলেছি একটি মুরগী ফার্ম। প্রথমে ১ হাজার লেয়ার মুরগী নিয়ে ফার্মটি শুরু করি। বর্তমানে আমার ফার্মে আড়াই হাজার লেয়ার মুরগী রয়েছে। ফার্ম মালিক রুবেল আরও জানান, এই ফার্মে আমি প্রায় ১০লাখ টাকার উপরে বিনিয়োগ করেছি। প্রতিদিন আড়াই হাজার মুরগী থেকে গড়ে ২হাজার ডিন পাচ্ছি। বাজারে প্রতি শ’ডিমের পাইকারী মূল্য ৬১০টাকা। এ হিসেবে প্রতিদিন ডিম বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১২হাজার টাকার মত। মুরগীর খাদ্য, ওষধ, ভ্যাকসিন, ফার্ম পরিচর্যা খরচ, মুরগীর মত্যু, বিদ্যুত বিলসহ আনুষাঙ্গিক সব মিলিয়ে আমার দৈনিক প্রায় ১০হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা নীট আয় হচ্ছে। বাজারে ডিমের দাম ভালো থাকলে লাভ আরও ভালো লাভ হতো বলে তিনি জানান। নান্দিনা এলাকার ফকির নামে এক বয়লার মুরগীর ফার্ম মালিক জানান, বর্তমানে এক দিনের একটি বাচ্চার দাম ৩৮-৪০টাকা। ফার্মে একটি বাচ্চা ৩০দিন লালন পালন করলে দেড় কেজি ওজন বাড়ে। দেড়কেজি ওজনের একটি বয়লার মুরগীর বর্তমান খুচরা বাজার মূল্য ১৯০থেকে দুইশ’ টাকা। এর মধ্যে প্রতিটি বাচ্চা একমাসের খাদ্য, ভ্যাকসিন, ওষধ, বিদ্যুত বিল, পরিচর্যাসহ আনুষাঙ্গিক খরচ রয়েছে ১১০-১২০টাকা। এই হিসেবে একটি বাচ্চা ক্রয় থেকে শুরু করে এক মাস লালন পালনের খরচ হচ্ছে দেড়শ টাকা। দেড় কেজি ওজনের প্রতিটি বয়লার মুরগী বিক্রিতে লাভ হচ্ছে ৩০থেকে৪০টাকা। তবে এই লভ্যাংশটা ভাগাভাগি হয়ে যায় পোল্টি মালিক ও খুচরা বিক্রয়কারী দোকানদারের মধ্যে। এলাকার একাধিক বয়লার ফার্মের মালিক জানান, গত দেড় দুই বছর আগে একদিনের একটি বয়লার মরগীর বাচ্চার মূল্য ছিল ৭৫থেকে ৮০টাকা। অথচ বাজারে ডিমের কম থাকায় একদিনের বাচ্চার দাম আগের দামের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে । এদিকে, জামালপুর আফতাব বহুমুখী ফার্মস লি: এর মালিক মোঃ সুরুজ্জামান জানান, জেলায় লেয়ার ও বয়লার মুরগী ফার্মের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরও জানান, গত ২০১২ সনে জেলায় পোল্টি উপর এক মহা দুর্যোগ বয়ে যায়। ওই সময় বার্ড ফ্লু আতংকে খামারিরা তাদের লোকসানের বোঝা কমিয়ে আনতে পানির দরে তাদের খামারের সকল মুরগি স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে দিয়েছিল। বার্ড ফ্লু আতংকে সকল খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম এখন আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। গত বছর দুইয়েকের বেশি সময় ধরে জেলায় পোল্টি ফার্মগুলোতে কোন মহামারি দুর্যোগ নেই। প্রতি মাসে এ জেলার ডিম উৎপাদনে বিভিন্ন ফার্মে প্রায় ৪লাখ লেয়ার এবং মাংস উৎপাদনে প্রায় ৮লাখ বয়লার বাচ্চা প্রবেশ করছে। একদিনের বাচ্চা প্রবেশের বিষয়টিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আজগর আলী এ প্রতিনিধিকে জানান, বর্তমানে পোল্টি ফার্মগুলোতে সকল প্রকার রোগ ব্যধি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। পোল্টি ফার্ম মালিকরাও আমাদের নিয়মিত পরামর্শ গ্রহণ করছেন। ফলে পোল্টি ফার্মগুলোতে কোন মড়ক নেয়।
