রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে চলতি মাসের বরাদ্দকৃত ৩৩০ মে. টন যমুনা ইউরিয়া সার উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করায় এলাকায় ইউরিয়া সারের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে, চলতি আমন আবাদ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
রাণীনগর কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি আগষ্ট মাসে রাণীনগর উপজেলার সারের মোট চাহিদা ছিল প্রায় ৩ হাজার মে. টন। কিন্তু রাণীনগরের বিসিআইসি’র তালিকাভুক্ত ১১ জন সার ডিলাররা পেয়েছেন মাত্র ১৩ শত ২০ মে. টন। প্রতি ডিলার বাফার ইউরিয়া ৯০ মে. টন ও যমুনা ইউরিয়া ৩০ মে. টন করে বরাদ্দ পেয়েছেন। যা চাহিদার তুলনায় বরাদ্দকৃত সারের পরিমাণ অর্ধেকেরও কম। এমনিতে চাহিদা মতো সার না পাওয়ায় এলাকায় চলছে সার সংকট । এমতবস্থায় ১১ জন সার ডিলার বরাদ্দকৃত ইউরিয়া সার বাফার গুদাম এবং যমুনা (মিলগেট) থেকে সার উত্তোলন করলেও নিজ নিজ এলাকায় সার না এনে যমুনা (মিলগেটে)’র ৩৩০ মে. টন সার অন্যত্র কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। যার কারণে রাণীনগরের সর্বত্র ইউরিয়া সারের সংকট দেখা দিয়েছে।
রাণীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের কৃষক আইয়ুব হোসেন জানান, তিনি এবার প্রায় ৫ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। ইউরিয়া সার কিনতে গিয়ে দোকানে সার পাননি যদিও বা সার পাওয়া গেল সেটা আবার ছিরাফাটা বস্তায় ভরানো এবং খুবই দলা ধরা যা জমিতে ব্যবহারে অনুপযোগী। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন কৃষকলীগরে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। কুজাইল গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, তার পরিবারে প্রায় ৫২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু সার না পাওয়ার ফলে ধানে ইউরিয়া সার দিতে পারছেননা। আবার যে সারগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো সার দলাধরা যা জমিতে ব্যবহারের অনুপযোগী। করজগ্রামের খুচরা সার ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম জানান, তার এলাকায় একজন খুচরা সার ব্যবসায়ীর আওতায় সার বিক্রি করছেন, তিনি জানান, চাহিদা মোতাবেক বিসিআইসি ডিলারদের সার দেয়ার কথা থাকলেও তাদের কাছ থেকে কোন সার পাচ্ছেননা। রাণীনগর উপজেলায় যে পরিমানে কৃষক রয়েছে তার তুলনায় ডিলার অনেক কম তাই কৃষকদের সুবির্ধার্থে আরও বিসিআইসি ডিলার নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান কৃষকরা । আবাদপুকুর এলাকার খুচরা সার ব্যাবসায়ী ও স্থানীয় ইউনয়ন আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জানান, কৃষি অফিসারের যোগসাজসে চলতি আগষ্ট মাসের বরাদ্দকৃত ৩৩০ মে. টন যমুনা ইউরিয়া সার বিসিআইসি ১১ জন সার ডিলাররা উত্তোলন করে এলাকায় না নিয়ে এসে কালোবাজারে বেশি মুনাফার আশায় চড়া দামে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে করে এলাকায় সার সংকট দেখা দেয়ায় কৃষকরা চলতি আবাদ নিয়ে শংকায় পড়েছেন।
এদিকে গত বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম পাটওয়ারী ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে রাণীনগর সদরে শত ট্রেডার্সের মালিক শরিফুল ইসলাম নামের এক খুচরা সার ব্যবসায়ীকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ইউরিয়া সার ক্রয়/বিক্রয় করার অপরাধে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন।
রাণীনগর সার ডিলার সমিতির সভাপতি সাত্তার সাহ’র সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালোবাজারে সার বিক্রির ঘটনা সত্য নয় বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র সরকার জানান, তিনি নিজে গুদামগুলো পরিদর্শন না করে সার ডিলারদের মজুদ রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু বাস্তবে কোন ডিলারদের গুদাম ঘরে যমুনা (মিলগেটের) সার নেই। তার সহযোগীতায় কালোবাজারে সার বিক্রির বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের কাছে এড়িয়ে যান।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম পাটওয়ারী জানান, তিনি কালোবাজারে সার বিক্রির ঘটনা জেনেছেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে ১১ জন সার ডিলার যমুনার ৩৩০ মে. টন ইউরিয়া সার তাদের গুদাম ঘরে মজুদ দেখানোর জন্য মুসলেখানামা দিয়েছে। বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সাথে দেখছেন বলে জানান।
