চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : লামার ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারীর আগা নামক দূর্ঘম পাহাড়ী এলাকায় রাবার বাগানে একটি বন্যহাতিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ হাতিটি খাদ্যের সন্ধ্যানে রাবার বাগানে আসলে আবদুল কাদের নামের এক কর্মচারী গুলি করে হত্যা করে। বনবিভাগের কর্মকর্তারা রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাতি মৃত্যু নিশ্চিত করলেও এখনো কাউকে আসামী করে মামলা করেনি।
লামা বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রায় চৌধূরী জানিয়েছেন, খবর পেয়ে তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বন্যহাতি মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি তাৎক্ষনিক লামা থানাসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। হাতিটি গুলি বিদ্ধ হয়ে নাকি অন্য কোন কারনে মারা গেছে সে বিষয়টি উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের রিপোর্ট পাওয়ার পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে তিনি জানান। লামা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হাতিটি ৫/৬ দিন পূর্বে মারা গেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে। হাতির শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে জানান, চকরিয়া উপজেলা ডুলাহাজারা ইউনিয়নের এমদাদ মিয়ার পুত্র রহমত উল্লাহ ও আলী আহমদ সওদাগরের পুত্র জিয়াউদ্দিনের মালিকাধীন রাবার বাগানে আবদুল কাদের কর্মচারী হিসাবে চাকরি করতো। সেই সুবাদে গত ৭আগষ্ট কাদের অবৈধ অস্ত্র নিয়ে রাবার বাগানে পাহারা দিচ্ছেছিলো। খাদ্যের সন্ধানে গভীর পাহাড় থেকে আসা একটি বন্যহাতি বাগানে প্রবেশ করলে ওই কর্মচারী গুলি হত্যা করে। বর্তমানে ওইবাগানে এখনো পর্যন্ত বন্যহাতিটি মৃত্যু অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মুলত ওই হাতির মুল্যবান অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করার জন্য হত্যা করা হয়েছে বলে এলাকাবাসি জানান। এদিকে বন্যহাতিকে হত্যার দায়ে লামা বনবিভাগ লামা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। তবে হাতিটিকে বাগানের কর্মচারী কাদের গুলি করে হত্যা করলেও এখনো তার বিরুদ্ধে মামলা করেনি বনবিভাগ।
ফাইতংয়ে বাড়িতে ঢুকে হামলা ও ভাংচুর : মহিলাসহ আহত-৪, শিশুকে পুকুরে নিক্ষেপ

আদালতে জামিন নিতে যাওয়ার সুযোগে ফাইতং ইউনিয়নের পুর্ব নয়াপাড়া গ্রামে বসতবাড়িতে ঢুকে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে। এসময় তাদের মারধরে ওই পরিবারের মহিলাসহ ৪জন গুরুতর আহত হয়েছে। ঘটনার সময় দুর্বৃত্তরা বাড়ির এক শিশুকে ছুঁেড় নিক্ষেপ করেছে বাড়ির পাশের পুকুরে। আহতদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটেছে এ ঘটনা। হামলার এ ঘটনায় চট্টগ্রামের জাহাংগীর আলম নামের এক প্রভাবশালী ভুমিদসে্যুর নেতৃত্বে ৩০-৩৫জনের একটি দুর্বৃত্ত দল অংশ নেয় বলে গতকাল বিকেলে চকরিয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন আক্রান্ত পরিবারের গৃহকর্তা আবদুল কাদের। বর্তমানে তার বাড়ি ও জায়গার চারপাশে কাটা তাঁরের বেড়া দিয়ে বেশির ভাগ জায়গা জবরদখলে নিয়েছে অভিযুক্তরা।
অভিযোগে গৃহকর্তা আবদুল কাদের জানান, ফাইতং ইউনিয়নের পুর্ব নয়াপাড়া গ্রামে প্রায় সাত একর ভোগদখলীয় জায়গায় বসতি নির্মাণ করে বিগত ৩৫বছর ধরে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। বাড়ির পাশে পাহাড়ি জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি বাগান। বর্তমানে বাগানের প্রায় গাছ বড় হয়েছে। তিনি আরো জানান, তার জায়গার লাগোয়া পেকুয়া উপজেলার জমিদার বাড়ির নজরুল ইসলাম চৌধুরী নামের অপরজনের মালিকানাধীন ফাইতং মৌজার ১২৬৯, ১৪১৬, ১৪১৯, ১৪৮৮ ও ১৬২৯ দাগে ১৩ একর ৬২শতক জায়গা রয়েছে। এসব জায়গা চলতিবছরের ১৫জুন রেজিষ্ট্রাট আমোক্তারনামা মুলে মালিক নজরুল ইসলাম চৌধুরী তাকে (আবদুল কাদের) মালিকানা হস্তান্তর করেন। ওই জায়গায় কয়েকবছর আগে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন আবদুল কাদের।
ভুক্তভোগী কাদের জানান, গত কিছুদিন ধরে তার দখলীয় ও আমোক্তানামা মুলে মালিকানাধীন জায়গা জবরদখলের জন্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা জাহাংগীর আলম নামের এক প্রভাবশালী ভুমিদস্যু নানাভাবে পায়ঁতারা চালিয়ে আসছে। এরই জের ধরে গত ৮ আগষ্ট অভিযুক্ত জাহাংগীর আলম লামা থানার এসআই আবু সুফিয়ানকে ম্যানেজ করে পুলিশের সহায়তায় ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের জড়ো করে তার (আবদুল কাদের) বাগানের ছোট-বড় ৩০টি গাছ কেটে লুটে নিয়ে যায়। এসময় বাঁধা দিতে গেলে পুলিশ গৃহকর্তা আবদুল কাদেরের ছেলে পেয়ারুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন ৯ আগষ্ট উল্টো লামা থানা পুলিশ জায়গার মালিক আবদুল কাদের, তার তিন ছেলেসহ ৭জনকে আসামি করে ভুমিদুস্য জাহাংগীর আলমের সহযোগি আদর্শ বড়–য়াকে বাদি বানিয়ে একটি মামলা (নম্বর-৩) রুজু করেন। ওইদিনই পুলিশ আটক পেয়ারুকে আদালতে প্রেরন করলে শুনানী শেষে বিচারক তাকে জামিন দেন।
জায়গার মালিক আবদুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সোমবার ওই মামলায় তিনি ছেলেসহ অন্যদের নিয়ে লামা উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জামিন নিতে যান। এ সুযোগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অভিযুক্ত দখলবাজ জাহাংগীর আলমের নেতৃত্বে সালাহ উদ্দিন, আদর্শ বড়–য়া, হৃতিৃক, রাহুল, হৃদয় ও রাসেল চাকমাসহ ৩০-৩৫জনের সশস্ত্র দুর্বৃত্ত ফাইতংস্থ ভুক্তভোগী আবদুল কাদেরের বসতবাড়িতে ঢুকে অর্তকিত হামলা চালায়। এসময় তাঁরা বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। এসময় দুর্বৃত্তদের বাঁধা দেয়ায় চেষ্টা করলে বেদম মারধর ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন গৃহকর্তা আবদুল কাদেরের স্ত্রী রেহেনা আক্তার (৫০), বড় মেয়ে উম্মে কাউছার খুকি (২৭), নাতনি মীম (৩), ছেলে মো.কাইছার পিয়ারু (২৫)। ঘটনার সময় দুর্বৃত্তরা শিশু মীমকে বাড়ির পাশে পুকুরে ছুঁেড় নিক্ষেপ করলে অল্পের জন্য প্রানে বেঁেচ যায় এ শিশু।
ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, লামা থানার একটি মামলায় আবদুল কাদের ও তার ছেলেরা উপজেলা আদালতে জামিন নিতে গেলে বাড়িতে এ হামলার ঘটনাটি ঘটে।
