শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি,ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অত্যাচার, জনবল সংকট, স্টাফদের খারাপ আচরণের কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে প্রশাসনিক অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। এসবের কারণে দিন দিন ভোগান্তি বাড়ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অত্যাচারে রোগীদের প্রাণ উষ্ঠাগত। সর্বপরি উপঢৌকনের বিনিময়ে ভূয়া ও নিম্নমানের ঔষধ লিখছেন চিকিৎসকরা। এই অভিযোগ করেছেন কয়েকজন সচেতন রোগী।

দিনাজপুর উপশহরে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডায়াবেটিক হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ৫৮ হাজার ছুঁইছুঁই করছে। এখানে দৈনিক চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ শতাধিক। প্রতিদিন এই বিপুল সংখ্যক রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার মত নেই কোন জনবল।
অভিযোগে জানা গেছে, রক্ত-প্রসাব পরীক্ষা ও ডাক্তারের সাক্ষাৎ, রির্পোট নিতে একজন রোগীকে ব্যয় করতে হয় প্রায় ৬ ঘন্টা। রোগীদের বসার স্থানে বসে থাকতে দেখা যায়, ঔষধ কোম্পানির প্র্রতিনিধিদের। ডাক্তারের বদলে চেম্বারে পিয়ন, দারোয়ান ও এটেন্ডেন্সেরা কাজ করে। এই ভাবে ডাক্তারদের চাটুুকদারি করে নিম্নমানের ঔষধ ব্যবস্থাপত্রে লিখিয়ে নেন। ফলে এ ধরনের নিম্নমানের ঔষধ খেয়ে রোগীরা তাড়াতাড়ি আরোগ্য লাভে ব্যর্থ হন।অভিযোগ উঠেছে, এ কারণে হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি থাকলেও কোন লাভ হয়না। শুধুমাত্র রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের কাছ হাসপাতালের স্টাফরা বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নেয়। আবার ইসিজি, রক্তের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এনডোসকপিসহ নানা পরীক্ষা ও সেবার মূল্য এখানে দ্বিগুণেরও বেশি। কাজেই দিনাজপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালটি সেবার পরিবর্তে এখন বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের মাসিক আয় ৫০ লাখ টাকারও বেশি হলেও স্টাফদের নিয়মিত বেতন দেওয়া হয় না। এখানে সেবা নিতে আসা রোগীরাও সবরকম সুবিধা থেকে বঞ্চিত। হাসপাতাল অভ্যন্তরে একটি উন্নতমানের ক্যান্টিন থাকলেও চড়া দামের কারণে সেখানে মানুষ যায় না। স্টাফদের পরামর্শে ও যোগসাজেশে হাসপাতালের বাইরে নর্দমার উপর অবস্থিত বিভিন্ন নিম্নমানের হোটেল থেকে উচ্চমূল্যে নিম্নমানের খাবার কিনে খায়।
দিনাজপুর ডায়াবেটিক হাসপাতলের চিকিৎসাকে সেবার মূল্য ও কার্যক্রমকে সত্যিকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য বর্তমান কমিটি ও প্র্রশাসনসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এমনটি প্র্রত্যাশা দিনাজপুরবাসীর।
অনিয়ম আর দুর্নীতির অক্টোপাসে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল

ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির অক্টোপাসে ভেস্তে যেতে বসেছে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক অবকাঠামো। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ’ হচ্ছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে হাসপাতালের সেবার মান।
অভিযোগে জানা যায়, প্রশাসনিক দূর্বলতাকে কেন্দ্র করে স্টাফরা যে যার মত করে রোগীদের জিম্মি করে অর্থ লুটপাট করছে। ভুক্তভোগী রোগীরা জানায় এখানে কুকুর বিড়াল কামড়ের ভ্যাকসিন বরাদ্দ আছে প্রতি মাসে ৪৫-৫০ টি বাকী ভ্যাকসিন বাইরে থেকে কিনে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল গেটের সামনে আনোয়ার মেডিকেল স্টোর কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিটি ভ্যাকসিনের মূল্য ৬শ টাকা অথচ হাসপাতালে নেওয়া হয় ৬৪০ টাকা। একটি ভ্যাকসিন চারজনকে দেওয়া যায়। এই ভ্যাকসিনের ৬৪০ টাকা ভ্যাকসিন দেওয়ার পূর্বেই রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয়। বাইরে থেকে প্রতিদিন ৫০ জন রোগীকে ভ্যাকসিন এনে দেওয়া হয়। এতে প্রতিদিন হাসপাতাল স্টাফদের অবৈধ আয় হয় প্রতিটি ভ্যাকসিনে ৪০ টাকা হিসাবে (৪০৫০) ২ হাজার টাকা। মাসে হয় (২৬ দিন ২ হাজার) ৫২ হাজার টাকা। এই টাকার কোন হিসাব নেই। কোন খাতে জমা হয় কিংবা কার পকেটে যায় এটার হিসাব কারও জানা নেই।
হাসপাতালের একজন কর্তব্যরত স্টাফকে ৪০ টাকা বেশি নেওয়ার প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এটা সিরিঞ্জের দাম। কথা হল সরকারি হাসপাতালে সিরিঞ্জের দাম নেওয়ার এখতিয়ার কোথায় পেল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে সাধারণ রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হলেই নার্সরা চিরকুটে স্বাক্ষর ছাড়ায় ওষুধ কিনে আনতে বলে বাইরের দোকান থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে সরকার চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও স্বল্প আয়ের মানুষ ও দুস্থ রোগীদের ভাগ্যে নিখরচায় ঔষধ জোটে না। হাসপাতালে রোগীদের খাদ্যের মান ও পরিমান পূর্ব থেকেই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আজও তার কোন পরিবর্তন হয়নি। জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, এই ওয়ার্ডেও কোন মশারী ও শিশুর মাথার বালিশ দেওয়া হয় না। টয়লেটের দরজায় কোন ছিটকিনি পাওয়া যায়নি। ওয়ার্ডের ভেতর নোংরা পরিবেশের ভেতর রয়েছে ২/৩টি হুলোবিড়াল। এ বিড়ালের লোম থেকে শিশুরা ডেপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয় বলে একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন। এখানকার নার্স ও আয়াদের ব্যবহার কর্কশ ও দাম্ভিক তারা রোগীদের সেবা করতে চায় না। তারা চায় রোগীদের শাসন করতে তাও মার্শাল কায়দায়। আবার রোগীদের রিলিজ সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় কর্তব্যরত নার্সেদের ইঙ্গিতে আয়া দাবী করে ৪০-৫০ টাকা এটা নাকি জেনারেল হাসপাতালের অলিখিত নিয়ম না দিলে নানা হয়রানির মুখে পড়তে হয় রোগী ও তার সঙ্গে আসা অভিবাভকদের।
অন্যদিকে হাসপাতালের বর্হিঃ বিভাগেও চলছে ব্যাপক অনিয়ম। সময় অসময়ে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের জটলা করে বসে থাকে রোগীদের বসার চেয়ারে অথচ রোগীরা থাকে দাঁড়িয়ে। আবার রোগীদের লাইনের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্ন ক্লিনিকের দালালরা তারা রোগীদের অভিবাভককে প্রভাবিত করে বাইরের ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়। রোগীদের বহনকারী ট্রলী বাহকদের সাথে রোগীদের হর-হামেশায় ঝামেলা হতে দেখা যায়। তারা রোগীকে দুই বা তিন তলায় ট্রলীতে নিয়ে গিয়ে দাবী করে ৩শ থেকে ৫শ টাকা যা চিকিৎসা নিতে আসা গরীব রোগীদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তখন নানা ভাবে ট্রলী বহনকারীরা রোগীদের অভিবাভককে গালমন্দসহ নানা ভাবে ভয় ভীতি দেখায়। দুর্নীতিতে আয়লব্ধ টাকার ভাগ নাকি উপর থেকে নিচু মহল পর্যন্ত বন্টন হয়ে থাকে। তাই কারো উপর অনিয়মের কোন অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাবে না, এমন কথা আমাদের জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হাসপাতাল স্টাফ। এসব ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটতে থাকলেও আর. এম. ও এবং সিভিল সার্জন এসবে দেখে না দেখার ভান করছেন, যেন জেগেই ঘুমাচ্ছেন তারা।
