৩০ জুলাই ছিল ‘বিশ্ব কুমির দিবস’ : কুমিরের আতঙ্ক কাটাতে ঘটা করে দেবতাকে পুজ দিলেন গ্রামবাসী
জয়দেব দাস, কলকাতা : বুধবার ছিল আন্তর্জাতিক ‘কুমির দিবস’। এই দিনটিকে সুন্দরবনের কোথাও সরকারি ভাবে পালন করা হল না। বেসকারি ভাবেও কোনও এনজিও দিনটিকে স্মরন করেনি। অথচ সুন্দরবনের কুমির বাঁচানোর বিষয়ে বন দফতর এবং এনজিওরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিচ্ছে। এই বিষয়ে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর অর্ণব সেনগুপ্ত বলেন, ‘বাঘ একটি বড়ো বিষয় তাই তাকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করা হয়। কিন্তু সেই তুলনায় কুমির নিয়ে কেউ এতো ভাবে না। তাই আমরাও এটি নিয়ে কিছুই করছি না।’
এদিকে, কুমিরের আতঙ্ক কাটাতে এবং কুমিরের দেবতাকে তুষ্ট করতে সুন্দবনের নদী এলাকার কয়েকটি গ্রামে ঘটা করে কুমির পুজো করলেন। কোথাও মাটির তৈরি কুমিরের মূর্তি, কোথাও কুমির দেবতা কালু রায়, কোথাও কোথাও মন্দিরেও পুজো করা হয়েছে। ফলমূল ছাড়াও নদীর গুলে মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ির নৈবেদ্য সাজিয়ে পুজোর বন্দনা করা হয়েছে। মাসখানেক আগে কুমিরমারি গ্রামের এক বধূ কবিতা মণ্ডলকে মিন ধরার সময় কুমিরে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে গ্রামবাসীরা আর নদীতে নামতে চাই ছিলেন না। এদিন কালু রায় নামে কুমিরের দেবতাকে পুজো দেওয়া হয়েছে। এখানকার পুরোহিত শঙ্কর ঘোষাল বলেন, ‘গ্রামবাসী ও মৎস্যজীবীরা নদীতে নামতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাই আজ, কুমির দিবসে ভক্তিভরে পুজো দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনের মানৎ ছিল। তাও এদিন চুকোনো হয়েছে।’ পাথরপ্রতিমা ব্লকেও এদিন পুজো হয়েছে। এখানে কুমিরের মূর্তিতে পুজো করা হয়েছে। বনশ্যামনগরের পুরোহিত কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এখানে কুমিরের খবই উৎপাত। গ্রামবাসীরা তো প্রাণ হাতে নিয়ে নদীতে যান। আমরা তো সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। এখানে অন্যান্য দেবদেবীর চেয়ে কুমিরের দেবতার পুজোর চল বেশি।’ প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের ৫৪ টি দ্বীপে মানুষের বাস। এখানকার মানুষ অতীত থেকে আজও সরাসরি প্রক্ততিতির উপর নির্ভরশীল। যে এলাকায় যে প্রাণীর বেশী ভয়, সেই এলাকায় ওই প্রাণীকেই বেশ পুজো করে তাঁকে তুষ্ট করার চেষ্টা হয়। কুমির ছাড়াও, বাঘ, সাপের দেবতার আরাধনা করে থেকেন গ্রামের মানুষ। সরকারি হিসাবে জানান হয়েছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৭ জনকে কুমিরে টেনে নিয়ে গিয়েছে। তারমধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৩ সালে এই মৃত্যু ছিল ৮ জন। ২০১২ সালে ছিল ১৩ জন।
সুন্দরবনের কুমিরমারি, সাতজেলিয়া, বাসন্তীর ঝড়খালি, হাড়ভাঙি, পাথরপ্রতিমার জি-প্লট, বনশ্যামনগর, ঘনশ্যাপুর, কে-প্লট এলাকার নদী গুলিতে কুমিরের খুবই উপদ্রব। নদী সংলগ্ন গরিব বাসিন্দারা নদীরে চিংড়ির মিন ধরতে নদীতে যান সেই সময় তাঁদের অনেকেই কুমিরে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান বলে তাঁদের দাবি। ইদানিং নদীতে সেই কুমিরের সংখ্যা অনেক গিয়েছে। ওই সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য ১৯৭৬ সাল থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে বন দফতর। এরজন্য পাথরপ্রতিমা ব্লকের ভগবৎপুরে একটি কুমির প্রকল্প চলছে। সেখানে কুমিরের প্রজনন ঘটিয়ে জন্ম দেওয়ানো এবং বড়ো করে নদীতে ছাড়াও হচ্ছে। সখ্যাও বাড়ছে দ্রুতহারে। তাদের পরিমাণ জানতে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার বেশ কিছু অংশে ২০১২ সালের ১৬-১৮ জানুয়ারি তিন দিন ধরে ৪,২৬৪ বর্গ কিমি বনাঞ্চলের মধ্যে ১,১৬৩.২০ বর্গকিমি জায়গায় সমীক্ষা চালিয়ে ২৪০ টি কুমিরের সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে ৬৯ টি পূর্ণ বয়স্ক, ৬১ টি কিশোর এবং ১০ টি বাচ্চা। এছাড়াও আরও ১০০ টি কুমিরের খোঁজ মিলেছে যাদের বয়স নির্ধারণ করা যায়নি।
