রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাঘা শাহী মসজিদ ও মাজার শরীফে অনুষ্ঠিত পবিত্র ওরশ মোবারক উপলক্ষে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী মেলার ব্যাপক আয়োজন চলছে। মেলায় সার্কাস প্যান্ডেল ও অন্যান্য দোকানপাট বসানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রতি বছরের তুলনায় এবছর মেলা অনেক আকর্ষণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন মেলা কমিটি ও বাঘাবাসী। ইতোমধ্যেই চারিদিকে সাজ সাজ রব উঠেছে। এবারের মেলায় সকল প্রকার বিশৃংখলা এড়াতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মেলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও টহল থাকবে র্যাবের।

প্রায় ৫’শ বছরের পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী ঈদ মেলা পবিত্র রমজান শেষে পবিত্র ওরশ মোবারক উপলক্ষে প্রতি বছর আয়োজন করা হয়ে থাকে। আর এই মেলায় রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় সার্কাস, পুতুলনাচের পাশাপাশি জুয়ার আসরসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ড হতে পারে বলে ধারণা করছে উপজেলার জনসাধারণ। আগের দিনে এসব কর্মকান্ড না হলেও এখন তা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। মেলার ডাক বেশি হওয়ায় এবছর অশ্লীল ও অনৈতিক কর্মকান্ড বেশি হবে বলে আশঙ্কা করছে বাঘাবাসী।
রাজশাহী বিভাগীয় শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বকোণে বাঘা উপজেলা অবস্থিত। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন রকমের পণ্য ব্যবসায়ী সব মিলে প্রায় ২ হাজার দোকানী তাদের পসরা সাজিয়ে বসেন মেলায় বেচা-কেনার জন্য। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই মেলার কেনা-বেচা। মেলায় পাওয়া যায় সব ধরণের মিষ্টি, বাচ্চাদের খেলনা সমগ্রী, মনোহারিসামগ্রী, লৌহজাতদ্রব্য, কাঠের সামগ্রী, আলনা, চেয়ার, টেবিল, খাট, ড্রেসিং টেবিল, পালঙ্ক, শো-কেস এবং মাটির তৈরী বিভিন্ন পাতিল, সদর ঘাটের পান, নাটোরের বনলতা পানসহ প্রভৃতি। মাজারের প্রধান গেটের দু’সারিতে বসে কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন রকমের খেলনা জাতীয় পণ্য। বাঁশ, বেত, স্টীল ও কাঠের তৈরী জিনিসের অপূর্ব সমারোহে পরিপূর্ণ থাকে বাঘার কলেজ মাঠ। লোহার কর্মকার ও মৃৎ শিল্পীরা মেলায় নিয়ে আসেন মাটি ও লোহার তৈরী বিচিত্র জিনিসপত্র। ভেষজ ও ফল-ফুলের নার্সারীর দোকান, দেশ বরেণ্য, রাজনৈতিক নেতা, কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, অভিনেতা ও খেলোয়াড়দের ফটোসহ ধর্মীয় পুস্তক বিক্রেতারা খন্ড খন্ড দোকান সাজিয়ে বসেন মেলার চারিদিকে।বাঘার এই ঐতিহাসিক মেলার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়, ধর্মীয় আদর্শের দিক নির্দেশনায় এক মহৎ পুরুষ আব্বাসীয় বংশের হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রঃ) ও তার পুত্র হযরত আব্দুল হামিদ দানিশ মান্দ (রাঃ)’র সাধনার পাঠস্থান বাঘা। আধ্যাত্মিক দরবেশের ওফাৎ দিবসে ধর্মীয় ওরস মোবারক উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রতি বছর ঈদ-উল-ফিতরের ঈদে আয়োজন করা হয় এই বিশাল মেলার। এই মেলা ‘বাঘার ঈদ মেলা’ নামে পরিচিত। এ মেলায় প্রথম দিকে লোকসংখ্যা কম হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে মেলার পরিধি ও লোকসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। বাঘা ওয়াকফ মাজার পরিচালনা কমিটি ধর্মীয় ওরশ ও মেলা পরিচালনা করে থাকেন। মেলার ইজারা থেকে প্রতি বছর আয় হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মেলার ডাক হয়েছে ২৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসবকে কেন্দ্র করে এত বড় মেলা দেশের আর কোথাও হয় বলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও সকল সম্প্রদায়ের লোকজন আসেন এই মেলায়। দেশের দুর-দুরান্ত থেকে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে এই মেলায়।
