নড়াইল প্রতিনিধি: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন হলেও সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা সরকারী কর্মকর্তারাই। দেশের অসংখ্য মানুষ এখনো ডিজিটাল বাংলাদেশ বা ডিজিটাল শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ডিজিটাল বাংলাদেশের গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করার জন্য সরকার নানারকম পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। তম্মধ্যে অন্যতম প্রধান হল “ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা”। এসব মেলা বাস্তবায়ন করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে সহায়তা করে থাকে। নড়াইলের কালিয়ায় নামমাত্র মেলা করে সরকারী বরাদ্দের সিংহভাগ টাকাই লুটে নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহীন হোসেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় কালিয়া উপজেলায় তথ্য প্রযুক্তি মেলা করার জন্য সরকারী বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা। উপজেলার আপামর জনসাধারণকে প্রচারণার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে অবহিত করার কথা থাকলেও এখানে তা করা হয়নি। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইউপি তথ্যসেবা কেন্দ্রকে দিয়ে কালিয়া পৌরসভাস্থ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে নাম মাত্র ২ দিন ব্যাপী মেলা করা হয়। মেলাটি গত ২৯-৩০ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দুইদিন ব্যাপী ওই মেলা সম্পর্কে খোদ কালিয়া পৌরসভার অধিকাংশ মানুষ জানেন না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদেরও এ ব্যাপারে কিছু জানা নেই।
এদিকে উক্ত মেলা শেষে একটি ছোট সমাপনী অনুষ্ঠান করে ১৭ টি পেনড্রাইভ এবং তিনটি মডেম অংশগ্রহনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে দেয়া হয়। মেলা জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও উপজেলাবাসী তা জানেন না কেন, ইউএনওর কাছ থেকে এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর মেলেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মেলা অনুষ্ঠানের খরচের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হলে প্রায় ১ মাস ধরে ঘুরিয়ে গত ২২ জুলাই অদাপ্তরীক তথ্য দেয়া হয় যেখানে পুরো ৫০ হাজার টাকা খরচের হিসাব দেখানো হয়েছে, যা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এব্যাপারে তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রস্তুতিমূলক সভায় যে খরচ করা হয়েছে তা খুবই সামান্য, পুরস্কার দেয়ার জন্য কেনা হয় ৫৭০ টাকা মূল্যের ১৭ টি আডাটা ব্রান্ডের ১৬ জিবি পেনড্রাইভ এবং ১৪৪৯ টাকা মূল্যের ৩টি মডেম, তাতে পুরস্কারের মোট মূল্য দাড়ায় ১৪০৩৭টাকা, স্কুল কক্ষ পরিষ্কারে ২০০ টাকার বেশী ব্যয় না হলেও দেখানো হয়েছে ৫৫০০ টাকা, সমাপণী সভা রোজার প্রথমটাতে পড়ায় কোন আপ্যায়ন ব্যয় না থাকলেও ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩০০০ টাকা, ব্যানারে প্রকৃত খরচ ৭০০ টাকার বেশী না হলেও দেখনো হয়েছে তিনগুন, জেলা ডিজিটাল মেলায় অংশগ্রহণ ব্যয় ৩৫০০/- দেখিয়ে দেয়া হয়েছে শুভংকরে ফাঁকি। এভাবে ভুয়া বিল এবং ভাউচারের মাধ্যমে অর্ধেকেরও বেশি টাকা লোপাট করে দায়সারা মেলা করার ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে মানুষ অজ্ঞাত রয়ে গেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলা গড়া শুধুই আওয়াজে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কালিয়ার জনসাধারণ তাই এখনো প্রধানমন্ত্রীকে “ডিজিটাল প্রধানমন্ত্রী” বলে ব্যঙ্গ করতে দ্বিধা করেন না। সচেতন মহল এর জন্য এমন দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের ধিক্কার জানিয়েছেন।