নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা : ‘আব্বারা আর কত টাকা দিয়ে পারে? বিয়ের পর থেকে তারা দিতেই আছে। যৌতুক ও পরকীয়ার কারণে স্বামী আমার প্রায়ই মারপিট করে। সেদিন চাহিদা মতো যৌতুক দিতে না পারায় স্বামী আমাকে মাথায় কুপিয়েছে। ভেঙ্গে দিয়েছে বাম হাত। আমার জীবনটা বৃথা।’ এমনিভাবে কথাগুলো বলছিলেন তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের চিকিৎসাধীন দু’সন্তানের জননী শাহানারা বেগম (৩২)। সে তালা উপজেলার টিকারামপুর গ্রামের হান্নান সরদারের স্ত্রী।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে তালা হাসপাতালের ৩য় তলার ৫ নং বেডে গিয়ে দেখা যায়, ব্যথা আর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শাহানারা। তাঁর বাম হাত পিটিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছে ও মাথায় কুপিয়ে জখম করেছে পাষন্ড স্বামী। এছাড়াও শরীরে রয়েছে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। বিভিন্ন সময়ে ঝামেলা হতো সংসারে। যৌতুক ও পরকীয়ার কারণে পাষন্ড স্বামী ওই গৃহবধূকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। গত ১০ জুলাই তালা উপজেলার টিকারামপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার তিন দিন পর গ্রামবাসির সহযোগীতায় গৃহবধূকে উদ্ধার করে ছেলে রিয়াজ হাসান তাঁর মা শাহানারাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে ভর্তির পরে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন কেউ তাকে দেখতে আসেনি। বরং স্বামী হান্নান সরদার ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অব্যাহত হুমকিতে গৃহবধূর পরিবার আইনের আশ্রয় নিতেও ভয় পাচ্ছেন।
শাহানারা বেগমের পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে তালা উপজেলার বড়কাশিপুর গ্রামের শাহানারা খাতুনের সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার টিকারামপুর গ্রামের আবুল সরদারের ছেলে হান্নান সরদারের। সাংসারিক জীবনে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জম্ম হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে শাহানারার উপর যৌতুকের জন্য শুরু হয় নির্যাতন।
শাহানারা বেগমের ভাষ্যমতে, বিয়ের পর থেকে তার উপর চলে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন। কারণ তাদের চাহিদা মতো যৌতুক দিতে পারেনি শাহানারার পিতা। এজন্য তার উপর একের পর এক নির্যাতন চালায় তারা। মায়ের সাথে হাসপাতালে থাকা ছেলে রিয়াজ হাসান বলেন, ‘আমার পাষন্ড পিতা প্রতিদিনই মায়ের উপর নির্যাতন করে। এবার মায়ের হাত ভেঙ্গে দিয়েছে এবং মাথায় কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে।’ তবে বিষয়টি নিয়ে শাহানারার স্বামী হান্নান সরদারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের’র আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, শাহানারার বাম হাত ভেঙ্গে গেছে এবং মাথায় কোপের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া তাঁর পা ও তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার অবস্থা একটু উন্নতি হলেও মাথা ও হাতের অবস্থা খুবই খারাপ।
