তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা : শুটকীর নামে কি খাচ্ছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষগুলো। মাছের পরিবর্তনে শুটকী তরকারি কিংবা শিঁদল বর্তা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে এসব মানুষগুলো। আর এসব শুটকী ও শিঁদলের সাথে আস্ছে মানব শরীরের নিরব ঘাতকও। শুটকী মাছের ডিডিটি পাউডার মেশানো লাল ও হলদে রং শুটকী ও শিঁদলে কুমিল্লা বাজার সয়লাব।
কুমিল্লা মহানগরীর কান্দিরপাড় নিউ মার্কেট, রাজগঞ্জ, শাসনগাছা (বাদশা মিয়ার বাজার), মগবাড়ী চৌমুহুনী, টমছমব্রীজ ও ছকবাজার শুটকী দোকানগুলো থেকে শুরু করে ফুটপাত বাজার সবখানেই এই বিষাক্ত শুটকী ও শিঁদলের আগ্রাসন। শুটকী মাছের ডিডিটি পাউডারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক (ক্যামিকেল) মেশানো বাঁশপাতি শুটকী, লইট্টা শুটকী, এলকানা শুটকী, পুঁটি শুটকী, লোনা ইলিশ, ছুরি শুটকী, চিংড়ি শুটকী, রূপচাঁদা শুটকী, কাচকি শুটকী, ধইনচ্ছা শিঁদলসহ হরেক শুটকী ও শিঁদল। জেলেরা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র কিংবা দেশের ছোট ছোট নদ-নদী, পুকুর, খাল-বিল থেকে নানাহ রকমের মাছ শিকার করে তা রৌদ্রে শুকিয়ে শুটকী মাছ কিংবা শিঁদল তৈরী করে তাতে ডিডিটি পাউডার (বিষাক্ত কেমিক্যাল) মিশিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পাঠাচ্ছে। আর এ ধরনের শুটকী মাছের তরকারি কিংবা শিঁদল বর্তা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন নিন্মবিত্ত্ব ও মধ্যবিত্ত্ব পরিবারগুলো। শুটকী ও শিঁদল বর্তা খাওয়া থেকে উচ্চবিত্ত্ব পরিবারের লোকজনও পিছিয়ে নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শুটকী ব্যবসায়ি জানান- চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এর অসৎ ব্যবসায়ীরা শুটকী ও শিঁদলে বিষাক্ত ডিডিটি মিশিয়ে সারাদেশে পাঠাচ্ছে। আর মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর এসব শুটকী খেয়ে নানাহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষগুলো।
নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের এক শুটকী বিক্রেতা জানান- আমরা চট্টগ্রামের চামরা গুদাম থেকে শুটকী ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করছি। যদি কিছু হয়ে থাকে তা চট্টগ্রাম থেকেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের করারও কিছু নেই।
এদিকে, নগর জুড়ে বিষাক্ত শুটকী মাছের জমজমাট ব্যবসা চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেই। এসব ভেজাল প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলোর কার্যক্রমও ততটা চোখে পড়েনি। গত ২২ জুলাই খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলাম বলেন- খাদ্যে ফরমালিন সহ ভেজাল রোধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টকর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে একদিকে যেমন মানব জাতি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, তেমনি একশ্রেণির অসাধু শুটকী ব্যবসায়িরা ফয়দা লুটছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে এসব বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত শুটকী মাছ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে চলে যাচ্ছে। অল্প পুঁজিতে বেশী লাভের আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়িরা এসব শুটকী মাছ অবাধে বিক্রি করছেন।
কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ আলহাজ্ব মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী দৈনিক আমাদের কুমিল্লাকে জানান- ফসলের পোঁকা-মাকড় ধ্বংসের ডিডিটি পাউডার এখন ব্যবহৃত হয় বেশী শুটকী মাছে। এর ফলে মানুষের মুখের ও গলনালীর আলসার, ক্যান্সার, লিভার ফেইলিউর ও কিডনী ফেইলিউর এবং চর্মরোগ হচ্ছে। শুটকী মাছে যাতে পোঁকা-মাকড় না ধরে সেজন্য শুটকী মাছের ডিডিটি পাউডারের মতো বিষাক্ত জিনিসের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে শুটকীকে আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে কেমিক্যাল জাতীয় রং। আর পোঁকা-মাকড় রোধে মেশানো হয় ডিডিটি পাউডার । ফলে এখন আর কোনো শুটকীতে পোঁকা হয় না। মাসের পর মাস শুটকী ঝুলে থাকে এসব দোকানগুলোতে। এখন শুটকী মাছে কোন স্বাদ ও গন্ধ নেই। এর ফলে ক্যান্সারের রোগী দিন দিন বেড়েই চলছে। ডিডিটি পাউডার (বিষাক্ত কীটনাশক) সহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত এ ধরনের শুটকী মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে জনসাধারনের প্রতি আহবান জানান তিনি।