আজহারুল হক, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন (৪০দিন) প্রকল্প মাত্র ২০ দিনেই শেষ হয়ে গেছে। নানা অনিয়, তদারকির অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারনে ২০ দিনেই কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের মাঝেও চরম ক্ষোভ- অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের বরাদ্দকৃত কয়েক কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় এই অপকর্ম হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অতি দরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের জন্য গফরগাঁও উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে (প্রতি ইউনিয়নে ৩টি প্রকল্প) ৪৫টি প্রকল্পের বিপরীতে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। গত এপ্রিল থেকে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ২৯৩ জন অতি দরিদ্র শ্রমিক দৈনিক ২০০ টাকা মজুরীতে প্রকল্পগুলোতে কাজ শুরু করে।
কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় প্রকল্প এলাকায় তথ্যসংবালিত সাইনবোর্ড ব্যবহার করার কথা থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তদারকির অভাবে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ নামমাত্র করেই শেষ করা হয়। আবার অনেক এলাকায় কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে অন্য প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে বলে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। কোন কোন প্রকল্পে অর্ধেক শ্রমিকও পাওয়া যায়নি। আবার দেখা গেছে চরআলগী ইউনিয়নসহ বেশ কিছু এলাকায় শ্রমিকদের মজুরী কম দেওয়ার দরুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘেরাও করে শ্রমিকরা।
ওইসব অনিয়ম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নামমাত্র কাজ শেষ করা হয় ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে। ৪০ দিনের মধ্যে মাত্র ২০ দিন কাজ হওয়ার পর শুধু কাগজপত্র ঠিক করে পিআইওর সহযোগিতায় প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সভাপতিরা।
৪০ দিনের কাজের স্থলে ২০ দিন কাজ হওয়ায় অন্তত দুই কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। পরে এই টাকা উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ভাগভাটোয়ারা করে নেন।
একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপনারা বুঝেননা সবকিছু কেমনে চলছে। অপর এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের মাল দরিয়ায় ঢেলে দিলে আমাদের করার কি আছে।
সালটিয়া ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা মৎস কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, নিজের দফতরের কাজ রেখে অন্য দফতরে কতটুকু সময় দেওয়া সম্ভব। তার পরেও প্রকল্প চলাকালীন ২/৩ দিন গিয়েছি। এ বিষয়ে পিআইও সাহেব ভাল বলতে পারবেন।
রাওনা ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা ইউআরসির ইন্সট্রাকটর এনামুল হক বলেন, সকল ইউনিয়নে যেমন কাজ হয়েছে আমার এখানেও তেমনিই হয়েছে। আপনারা বুঝেগুনে বিব্রতকর প্রশ্ন করেন কেন।
নিগুয়ারী ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাজ কেমন হয়েছে তা সকলেই জানেন। তার পরেও পিআইও সাহেব ভাল বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রেজাউল করিম বলেন, কর্মসৃজনের কাজ একটু বিলম্বে শুরু হওয়ায় কয়েকদিন কম কাজ হলেও তা শতভাগ হয়েছে। তাতে কোন অনিয়ম-দূর্নীতি হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।